গ্রেটার নয়ডা থেকে একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা সামনে এসেছে। এখানে এক গৃহবধূ তার দুই মেয়ের সাথে হাত মিলিয়ে শাশুড়ি, শ্বশুর, স্বামী ও দুই দেওরকে বিষ খাইয়েছেন। বিষের মাত্রা কম থাকায় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটলেও তারা অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মা ও মেয়ে দুজনেই নিজ নিজ প্রেমিকদের সাথে পালিয়ে যায়। বাড়ি থেকে কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে প্রতিবেশীদের সন্দেহ হলে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। পরিবারের সবাইকে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে পুলিশ। পুলিশ পলাতক নারী ও তার মেয়েসহ তাদের দুজনের প্রেমিককেই আটক করেছে।
পুলিশ জানায়, মা ও দুই মেয়ের কিছু প্রেমের সম্পর্ক চলছিল। যার বিরোধিতা করছিলেন পরিবারের সদস্যরা। পরিবারের সদস্যরা তাদের দেখা করতে নিষেধ করেছিলেন। এমনকি এই কারণে ফোনেও প্রেমিকদের সাথে কথা বলতে পারছিলেন না। এরপর তিনজন মিলে পরিবারের সদস্যদের হত্যার পরিকল্পনা করলেও বিষ দিতে গিয়ে মেয়েটির মন সায় দেয় না। তাই খাবারে খুব মৃদু বিষ মিশিয়েছিলেন এক মেয়ে। মেয়েটি চেয়েছিল পরিবারের সদস্যরা যেন মারা না যায়। যদিও বিষের কারণে বাড়ির বৃদ্ধ মহিলার অবস্থা এখনও গুরুতর, যাকে গ্রেটার নয়ডার একটি হাসপাতালে চিকিৎসা করা হচ্ছে। তার তিন ছেলেই চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরেছে।
প্রেমিকরা গ্রামেরই ছিল:
বলা হচ্ছে, গ্রামের এক যুবকের সঙ্গে ওই মহিলার অবৈধ সম্পর্ক ছিল। যা পরিবারের সকল সদস্যেরই জানা ছিল। এ নিয়ে বাড়িতে সবসময় ঝগড়া হতো। এর পর ওই মহিলা একবার বাড়ি থেকে চলেও গিয়েছিল। অনেকদিন পর সে ফিরে আসে। স্বামী তাকে ফিরিয়ে নিলেও প্রেমিকের সাথে কোন যোগাযোগ রাখতে মানা করে। এ সময় তার দুই মেয়েরও গ্রামের দুই ছেলের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিষয়টি জানতে পেরেও তাদের মা ওই মহিলা কোনো প্রতিবাদ করেননি।
একদিন অভিযুক্ত মহিলা রাজকুমারী তার প্রেমিক রবীন্দ্রের সাথে ফোনে কথা বলছিলেন, যা তার স্বামী দেবেন্দ্র শুনেছিলেন। দেবেন্দ্র স্ত্রী ও তার প্রেমিকাকে কথা না বলার জন্য হুমকি দেন। এর পর স্ত্রীর ফোন ভেঙে দেন। এরপরই রাজকুমারী তার দুই মেয়েকে নিয়ে পরিবারের সকল সদস্যকে পথ থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল।
মেয়েদের প্রেমিকারা এই ষড়যন্ত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে:
অভিষেক ও দীপক, দুই মেয়ের প্রেমিকই এই পরিকল্পনায় মুখ্য ভূমিকায় ছিল। সবাই মিলে পরিকল্পনা করে পুরো পরিবারকে বিষ খাইয়ে মেরে ফেলার। এরপর তারা পালিয়ে যাবে। সব ধামাচাপা পড়লে ফিরে আসবে। যাতে সম্পত্তি দখল করা যায়। পরিকল্পনার পরের দিনই দীপক ও অভিষেক নিয়ে আসে বিষ।
পুলিশ জানিয়েছে, বিষ মেশানো খাবার মেয়ে অর্চনার সবাইকে দেওয়ার কথা ছিল। খাবার পরিবেশন করতে গিয়ে তার মন সায় দেয় না। সে এটা ভেবেই কাঁপতে থাকে যে সে বিষ দিচ্ছে যেটা সবাইকে মেরে ফেলতে পারে। এর পর বিষের মাত্রা কমানোর সিদ্ধান্ত নেয় অর্চনা। খাওয়ার কিছুক্ষণ পর রাত ১১টার দিকে পরিবারের সদস্যদের অবস্থার অবনতি হলে তারা সবাই অজ্ঞান হয়ে যায়।
এরপর মেয়ে ও তাদের প্রেমিকদের নিয়ে পালিয়ে যায় ওই নারী। দীর্ঘক্ষণ বাড়িতে কোনো আওয়াজ না হলে প্রতিবেশীদের সন্দেহ হয়। বাড়িতে গিয়ে তাদের দেখে হতবাক হয়ে যান সকলে। সবাই অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে ছিল। পুলিশে খবর দেওয়া হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় সবাইকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, ওই নারীর প্রেমিক ঘটনার সঙ্গে জড়িত না থাকলেও, দুই মেয়ের প্রেমিকদের ভূমিকা ছিল। আসলে প্রেমিকের সঙ্গে ঝগড়া হয়েছিল মহিলার। যার কারণে তিনি প্রেমিককে এই বিষয়টি জানাননি। পুলিশ, ওই মহিলা, তার দুই মেয়ে, ও তাদের দুই প্রেমিক এই কজনকে আটক করে জেলহাজতে পাঠায়।
পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যতজন বিষাক্ত খাবার খেয়েছিল তার মধ্যে চারজনের অবস্থা ভালো। এ ঘটনা সমাধানে পুলিশ দুটি টিম গঠন করেছে। গ্রেটার নয়ডার বেনারসি পুলিয়া থেকে ধৃতদের গ্রেফতার করা হয়েছে, যার মধ্যে মহিলা, তার দুই মেয়ে এবং তাদের দুই প্রেমিকও রয়েছে।