জলের আর এক নাম জীবন, এই কথা তো আমরা প্রত্যেককেই জানি। আর শরীরকে ঠিক রাখতে গেলে সারা দিনে সঠিক পরিমাণে জল খাওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন। কিন্তু শরীরের জন্য ভীষণ প্রয়োজনীয় জল খাওয়ারও কতগুলি নিয়ম আছে। তার মধ্যে একটি হচ্ছে জল কখন খাচ্ছে। এমন অনেকেই আছেন যাঁরা খেতে বসে খাওয়ার ফাঁকে বারবার জল পান করে থাকেন (Drinking Water During Meals)। সেটি কি ভালো অভ্যাস? নাকি খারাপ অভ্যাস। সেই বিষয়েই বলা হবে এখানে
আসলে মানুষের হজম পদ্ধতিটি বেশ জটিল। তাই হজমের কোনও সমস্যা দাড়ালে আমাদের শরীরে দেখা দেয় একাধিক সমস্যা। আর হজম শক্তির অনেকটাই দাড়িয়ে আছে খাওয়া দাওয়া, আর জল পানের অভ্যাসের উপরে। খাওয়ার মাঝে মাঝে জল খাওয়াকে অনেকেই মনে করেন একটি খারাপ অভ্যাস। এতে নাকি শরীরে অনেক জটিল সমস্যা দেখা দেয়। আবার অনেকের মত এটাই যে খাবার সময় বেশি করে জল খাওয়া ভাল। এতে শরীরে হজমে অনেকটাই সহায়তা করে। কিন্তু এই দুটি ধারণার মধ্যে কোনটা সঠিক। চলুন জেনে নেওয়া যাক।
খেতে বসে জল না খেলে গলা দিয়ে ভাত নামতে চায় না। অথবা ভাত বা রুটি বা অন্য কোনো খাবার শেষ করেও পর ঢকঢক করে যেন এক গ্লাস জল না খেলে তৃপ্তি লাভ হয়না। অনেকেরই এমন অভ্যাস থেকে থাকে। খাওয়ার পর জল খেলে হজম ভাল হয় এই ধারণা থেকেও অনেকেই শিশুদের খাওয়ার পরেই জল খেতেও শেখান বা অভ্যাস করান। তবে চিকিত্সকরা জানাচ্ছেন, খাওয়ার পর সেই খাবার হজমের জন্য প্রয়োজন যে গ্যাস্ট্রিক জুস, খাওয়ার পরেই জল খাওয়ার ফলে গ্যাস্ট্রিক জুস ঘনত্ব কমে পাতলা হয়ে যায় আর রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা বেড়ে যায়। যার কারণে হজম ভাল হওয়া তো দূরের কথা, বরং হজমের সমস্যা দেখা দেয়।
আমরা যা খাই তা হজম করতে মোটামুটি সময় লাগে ঘণ্টা দুয়েক। খাবার খাদ্যনালীর মাধ্যমে পৌঁছয় পাকস্থলীতে। খাবার হজম হওয়ার পর তার অতিরিক্ত অংশ পর সেখান থেকে কোলনে পৌঁছে বর্জ্য রূপে শরীর থেকে নির্গত হয়। আমাদের পাকস্থলী একটা স্বাভাবিক তরল-কঠিন সাম্য আর ph মাত্রা রয়েছে। খাওয়ার আগে জল খেলে শুধু যে গ্যাস্ট্রিক জুস পাতলা হয়ে যায় তা নয়, এর ফলে পরিপাক ক্রিয়াও হারও বেড়ে যায়। খাবার হজম হওয়ার জন্য যে সময় প্রয়োজন তার আগে বৃহদন্ত্রে পৌঁছে যায়। তাই খাওয়ার ঠিক আগে জল খাওয়া একদম উচিত নয়।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে খাবার খাওয়ার পর প্রয়োজনীয় পুষ্টি শরীরে শোষিত হতে একটা নির্ধারিত সময়ের প্রয়োজন হয়। খাওয়ার সাথে সাথেই জল খেলে হজমের জন্য প্রয়োজনীয় উত্সেচক ঠিক ভাবে কাজ করতে পারে না। যার কারণে উত্সেচকের ক্ষরণ কমে যায়। এই কারণে হতে থাকে বুকজ্বালা ও অ্যাসিডিটির মতো সমস্যা। পরিপাক ক্রিয়া তার নির্দিষ্ট পথে বাধা পাওয়ার কারণে অনেক খাবার হজম হয় না। এই হজম না হওয়া খাবারে উপস্থিত গ্লুকোজ ফ্যাটে পরিণত হয় ও শরীরে মেদ হিসেবে জমতে থাকে। এর ফলে শরীরের ওজন বাড়ে আর ডায়াবেটিস সমস্যা বাড়তে থাকে।