ভারত মন্দিরের দেশ। এই দেশের লোকাচারের সাথে জড়িয়ে আছে মন্দিরের সভ্যতা। প্রায় ১লক্ষ ৮হাজার মন্দির রয়েছে ভারতে৷ আর প্রায় প্রত্যেক মন্দিরের ভেতরেই ঝোলানো আছে ঘণ্টা। দেব দর্শনে আগত ভক্তরা মন্দিরে প্রবেশের সময়ে ঘণ্টা বাজান, এটি হিন্দু ধর্মের লোকদের মধ্যে বেশ প্রচলিত একটি রীতি। কোনো কোনো মন্দিরে হয়ত দেব বিগ্রহ নাও থাকতে পারে কিন্তু ঘণ্টা ঝোলানো নেই এমন হিন্দু মন্দির খুজেঁ পাওয়া দুষ্কর। কিন্তু ঠিক কি কারণে মন্দিরে ঘণ্টা ঝোলানো আবশ্যিক?
ধর্মীয় এবং আধ্যাত্মিক কারণ ছাড়াও এর পেছনে আছে বিজ্ঞানের যুক্তিও। জেনে নিন একে একে বৈজ্ঞানিক এবং আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা।
বৈজ্ঞানিক কি ব্যাখ্যা মেলে?
যে সমস্ত ঘন্টা বিভিন্ন মন্দিরে থাকে সেগুলি কিন্তু কোনও একটি সাধারণ ধাতু দিয়ে নির্মীত হয়না৷ ক্যাডিয়াম, সিসা,তামা, দস্তা, নিকেল, ক্রোমিয়াম ও ম্যানগিনিসের মতো ধাতু তাতে থাকে৷ ফলে এক ধরণের সাউন্ড থেরাপি তৈরী হয় এই মিশ্র ধাতুর তৈরি ঘণ্টার আওয়াজে৷ যখনই ঘণ্টা বাজে , তখন যে ধ্বনি তৈরি হয় তা স্থায়ী হয় প্রায় ১০ সেকেন্ড৷ মন শান্ত হয় এই আওয়াজে৷ সাহায্য করে শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখতে৷
শাস্ত্রে কি বলা আছে?
• পঞ্চভূতের প্রতীক হিসেবে তামা, রূপা, সোনা, দস্তা ও লোহা— এই পঞ্চ ধাতুতে তৈরি ঘণ্টা বিবেচিত হয়।
• এই ঘন্টা ধ্বনি রনং তোলে ভক্তের দ্বারা উচ্চারিত ‘ওঁ’ ধ্বনির সাথে। এই দুই ধ্বনির মিশ্রিত শব্দে সৃষ্ট হয় বিশেষ এক ভাব, যা আধাত্মিক ভাবের প্রকাশ ঘটায়।
• এই ঘন্টা বাজানো হয় মন্দিরে আরতি হওয়ার সময়েও। এমনটা মনে করা হয়, যে এই ঘন্টাধ্বনি অশুভ শক্তির বিনাশ করে বা বাধা দেয়। এছাড়াও ঘণ্টাধ্বনি চিত্তকে একাগ্র করে।
• এছাড়াও এর সাথেই আরো একটি ব্যাপার রয়েছে। মনে করা হয়, এই সময়ে ঘণ্টাধ্বনি ভক্তের চিত্তকে একাগ্র করে। পাশাপাশি, আরতির সময় ঘণ্টাধ্বনি করা হয় দূরবর্তী ভক্তকেও সচেতন করে।
• ‘স্কন্দ পুরাণ’ অনুযায়ী, মন্দিরে ঘণ্টাধ্বনি মানুযের একশত জন্মের পাপ স্খলন করে।
• শাস্ত্র অনুযায়ী, ঘণ্টা হল যুগের প্রতীক। যুগান্তের সময়ে নাকি শত সহস্র ঘণ্টা ধ্বনিত হবে।