প্রতি বছর আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া থেকে দশমী তিথির মধ্যে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে বিপত্তারিণী ব্রতর পুজোর চল রয়েছে। মুলত পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশা রাজ্যই এই ব্রত পুজো করা হয়। এই অঞ্চলে হিন্দু দেবী রূপে পুজিত হন এই মা বিপত্তারিণী। কথিত আছে এই দেবী সঙ্কটনাশিনীর একটি রূপ এবং দেবী দুর্গা ১০৮টি অবতারের মধ্যে অন্যতম। আসন্ন বিপদ আপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এই দেবীর পুজোর ব্রত পালিত হয়ে থাকে।
এই ব্রত পালনে ১৩ রকমের ফুল, ১৩ রকমের ফল, ১৩টি সুপারি , ১৩টি পান এবং ১৩ গাছা লাল সুতোতে ১৩ গাছা দূর্বা দিয়ে ১৩টি গিঁট বেঁধে ধাগা বা ডোর তৈরি করতে এবং পুরুষদের ডান হাতে ও মহিলাদের বাম হাতে এই ধাগা বা ডোর ধারণ করতে হয়। লাল সুতোর এই ধাগা বাঁধা এই পুজোর অন্যতম নিয়ম। এই লাল ধাগাই সারা বছর ধরে থেকে যায় নারী বা পুরুষ উভয়ের হাতের কব্জি কিংবা বাহুতে ৷ শুধু বিপত্তারিণী পুজো নয় অন্যান্য নানা ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে হিন্দু ধর্মের লোকেরা হাতে লাল সুতো বেঁধে থাকেন। কিন্তু এই বিষয়ে প্রশ্ন করলে সাধারণত একটিই উত্তর পাওয়া যাবে। যে এটি একটি ধর্মীয় সংস্কার। কিন্তু শুধু কি তাই? যথার্থ কারণটি কী? আসুন জেনে নেওয়া যাক
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস লাল সুতোর কিছু অলৌকিক ক্ষমতা রয়েছে ৷ বিপত্তারিণী পুজোর এই ‘লাল ডোর’ হাতে বাঁধলে সমস্ত আসন্ন বিপদ থেকে মিলবে রেহাই ৷ এর পাশাপাশি হিন্দু পূরাণেও লাল ধাগা ব্যবহারের বেশ কিছু উদাহরণ পাওয়া যায় ৷
কোনো এক সময় দেবতা এবং অসুরের মধ্যে বাঁধে ভয়ানক যুদ্ধ। যুদ্ধে অসুরদের পরাক্রম দেখে দেবরাজ ইন্দ্র ভীষণ চিন্তানিত হয়ে পড়েন। দেবরাজ কে চিন্তিত দেখে তাঁর স্ত্রী ইন্দ্রাণী শুরু করলেন স্বামীর জন্য প্রার্থনা । ইন্দ্রানী তাঁর সমস্ত ঐশ্বরিক শক্তি একত্রিত করে লাল সুতো দিয়ে স্বামীর জন্যে একটি ধাগা তৈরী করেন। যা দেবরাজ কে বিপদ থেকে রক্ষার উদ্দেশ্যে বানানো হয়। এর থেকেই লাল রঙের সুতোর ব্যাবহার বলে অনেকে মনে করেন।
এর সাথে সাথেই আরেকটি কাহিনীও জড়িত আছে এই লাল সুতোর সাথে। ভক্ত প্রহ্লাদের পুত্র বলিরাজ ভগবান ব্রহ্মার আশীর্বাদে স্বর্গ, মর্ত এবং পাতালের অধিকারী হয়েছিলেন। কিন্তু এতে দেবরাজ ইন্দ্রের সিংহাসন পরে সঙ্কটে। স্বর্গ কে বাঁচাতে ভগবান বিষ্ণু বামন রূপে জন্ম গ্রহণ করে দানবীর বলিরাজকে পাতালে পাঠিয়ে দেন। স্বর্গ রক্ষা পেলেও ভগবান বিষ্ণু বলির উপর প্রসন্ন হয়ে অমরত্ব দান করলে, আর্শীবাদ স্বরূপ শ্রী বিষ্ণু বলির হাতে বেঁধে দেন একটি লাল সুতো। তারপর থেকেই হিন্দুদের মধ্যে বাহুতে বা কব্জিতে লাল সুতো বাঁধার প্রচলন রয়েছে।