ভারত স্বাধীন হওয়ার ১৪ বছর পর আজকের দিনে ভারতীয় সেনা জওয়ানেরা জয়েন্ট অপারেশন চালিয়ে গোয়াকে পর্তুগাল শাসকদের থেকে স্বাধীন করিয়েছিল। বারবার হুঁশিয়ারি দেওয়ার পরেও পর্তুগীজরা গোয়া না ছাড়ায় সেনার অপারেশন আবশ্যিক হয়ে পড়েছিল। এরপর ভারতের তিন সেনা ১৯ ডিসেম্বর ১৯৬১ সালে অপারেশন বিজয় চালিয়ে পর্তুগীজদের গোয়া থেকে তাড়িয়ে দেয়।
গোয়া তাঁদের স্থাপনা দিবস ৩০ মে পালন করে, কারণ ৩০ মে ১৯৮৭ সালে গোয়াকে পূর্ণ রাজ্যের তকমা দেওয়া হয়। আর এরপর গোয়ায় সম্পূর্ণ ভাবে ভারতীয় সংবিধান লাগু হয়।
১৫১০ এর মার্চে আলফান্সো দ্যা আল্বুকর্কের নেতৃত্বে গোয়াতে আক্রমণ করে পর্তুগীজেরা। তখন গোয়ার কাছে কোন সেনা না থাকায়, পর্তুগীজরা খুব সহজেই গোয়া দখল নেয়। এরপর ভারতের ইউসুফ আদিল খা গোয়া থেকে পর্তুগীজদের তাড়ানোর জন্য হামলা চালায়। এরপর পর্তুগীজরা গোয়া ছেড়ে পালায়। কিন্তু আবারও আলফান্সো দ্যা আল্বুকর্ক বড় সেনা নিয়ে গোয়াতে হামলা চালিয়ে সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকা গুলো দখল নেয়।
পর্তুগীজরা একজন হিন্দুকে গোয়ার শাসক রুপে নিয়োজিত করে। এরপর গোয়া ভারতে পর্তুগীজ সাম্রাজ্যের রাজধানী রুপে স্বীকৃতি পায়। পর্তুগীজরা গোয়াতে নিজেদের ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য নৌসেনা ঘাঁটি বানায়। তাঁরা গোয়ার উন্নয়নের জন্য অনেক ব্যয়ও করে।
১৮০৯ থেকে ১৮১৫ এর মধ্যে নেপোলিয়ান পর্তুগালে কবজা করে নেয়। ১৮১৫ থেকে ১৯৪৭ পর্যন্ত গোয়া ইংরেজদের অধীনে ছিল। গোটা ভারতের মতো গোয়াতেও চরম শোষণ চালায় ইংরেজরা। গোয়া ইংরেজদের জন্য সামুদ্রিক ব্যাবসায় প্রধান কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল।
১৯৪৭ সালে ভারত ইংরেজদের শাসন থেকে স্বাধীন হয়ে যায়, কিন্তু গোয়াতে আবারও পর্তুগীজরা কবজা করে নেয়। উল্লেখ্য, ইংরেজরা ষড়যন্ত্র করে গোয়াকে পর্তুগীজদের হাতে তুলে দেয় আবার। যদিও ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহর লাল নেহরু অনেকবার ইংরেজদের কাছে গোয়াকে ভারতের অধীনে করার দাবি করেন।
দেশ স্বাধীন হওয়া পর ভারত সরকার যখন দেখল যে, কথাবার্তার মাধ্যমে পর্তুগীজরা গোয়ার দখল ছারবেনা। তখন ১৯৬১ সালে স্থলসেনা, বায়ুসেনা আর নৌসেনাকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়। মেজর জেনারেল কেপি ক্যান্ডেথের ১৭ ইনফ্রেন্ট্রি ডিভিশনের দ্বায়িত্ব পান। ভারতীয় সেনার প্রস্তুতির পরেও পর্তুগীজদের উপর কোন প্রভাব পড়েনি।
গোয়ায় হাওয়াই হামলা করার দায়িত্ব এয়ার ভাইস মার্শাল এরলিক পিন্টোর হাতে ছিল। ভারতীয় বায়ুসেনার কাছে সেই সময় ছয়টি হান্টার স্কোয়াড্রন আর চারটি ক্যানভেরা স্কোয়াড্রান ছিল। এরপর আট আর নয় ডিসেম্বর বায়ুসেনা পর্তুগীজদের আস্তানায় হামলা করে। স্থল সেনা জমিতে আর নৌসেনা সামুদ্রিক পথে ঘেরাবন্দি করে।
চারদিক থেকে ঘিরে যাওয়ার পর ১৯ ডিসেম্বর ১৯৬১ সালে তৎকালীন পর্তুগীজ গভর্নর ম্যানু বাসেলো ডি সিলভা ভারতের সামনে সমর্পণ চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। এর সাথে সাথে গোয়া, দমন আর দিউ দ্বীপ থেকে পর্তুগীজদের ৪৫১ বছরের পুরনো উপনিবেশ শাসন খতম হয়ে যায়। ২০ ডিসেম্বর ১৯৬২ সালে দয়ানন্দ ভাণ্ডারকর গোয়ার প্রথম মুখ্যমন্ত্রী হন।