পশ্চিমবঙ্গের সাগর দ্বীপের দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত কপিল মুনির আশ্রমে প্রতি বছর মক্রর সংক্রান্তিতে অনুষ্ঠিত হয় এই ধর্মীয় উৎসব ও মেলা। গঙ্গা নদী ও বঙ্গোপসাগরের এই পবিত্র মিলনস্থলে অনুষ্ঠিত হয় এই উৎসব। এটি একদিকে তীর্থভূমি আবার অন্যদিকে মেলা প্রাঙ্গণ। এই দুইয়ের মেলবন্ধনে আবদ্ধ গঙ্গাসাগর-মেলা। শহর থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই দ্বীপ। গঙ্গার মর্ত্যে প্রত্যাবর্তন ও সাগর রাজার পুত্রদের জীবন বিসর্জনের লোকগাঁথাকে ঘিরে গড়ে উঠেছে এই বিখ্যাত তীর্থস্থান গঙ্গাসাগর।
এখানে ছিল সাংখ্যদর্শনের আদি-প্রবক্তা কপিলমুনির আশ্রম। ভগবত গীতায় কপিলকে সিদ্ধাচল উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও হিন্দু প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে তিনি ব্রহ্মার পৌত্র মনুর বংশধর। আবার অনেকে বলেন কপিল হলেন বিষ্ণু ভক্ত অসুররাজ প্রহ্লাদের পুত্র। পুরাণ অনুযায়ী, ইক্ষাকু বংশের রাজা সগর অশ্বমেধ যজ্ঞের আয়োজন করেন। ভীত হয়ে দেবরাজ ইন্দ কপিল মুনির অজান্তেই ঘোড়া চুরি করে বেঁধে রাখেন তাঁর আশ্রমে। রাজার ষাট হাজার সন্তান ঘোড়া খুঁজতে এসে উপস্থিত হন আশ্রমে। না বুঝেই তাঁরা মুনিকে অপরাধী সাব্যস্ত করেন। কপিলমুনি রেগে গিয়ে তাঁদের অভিশাপ দেন এবং তাঁরা ভস্মীভূত হয়ে যায়। সাথে সাথে তাদের আত্মা নরকে নিক্ষিপ্ত হয়।
সাগরের পৌত্র ভগীরথ স্বর্গ থেকে গঙ্গাকে নিয়ে এসে সাগরপুত্রদের ভস্মাবশেষ ধুয়ে ফেলেন এবং তাঁদের আত্মাকে মুক্ত করে দেন। মহাভারতের বনপর্বে তীর্থযাত্রা অংশে গঙ্গাসাগর তীর্থের উল্লেখ রয়েছে। পালবংশের রাজা দেবপালের একটি লিপিতেও তাঁর গঙ্গাসাগর-সঙ্গমে ধর্মানুষ্ঠান করার কথা বলা হয়েছে। লোক-কাহিনী অনুযায়ী এখানে কপিল মুনির একটি আশ্রম ছিল। এক সময় সেটি সমুদ্রগর্ভে বিলীন হয়ে গেলে আশ্রমটিকে কেন্দ্র করে তার ভক্তদের সমাগম বাড়তে থাকে। প্রত্যেক বছর জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি মকরসংক্রান্তি বা পৌষ-সংক্রান্তির পূণ্যতীথিতে লক্ষ লক্ষ পূণ্যার্থীর সমাগম ঘটে। এই সমাগমকে ঘিরে গড়ে উঠেছে বিরাট মেলা যার নাম গঙ্গাসাগর-মেলা।