বর্তমানে তিনি আর নেই৷ কিন্তু তাঁর কালীপুজোর নস্টালজিয়া আছে পুরোদমে। আর সেই কালীপুজোর সাথে চির অমলিন হয়ে তিনিও ভীষণ ভাবে আছেন উত্তর কলকাতার এই বারোয়ারি পুজোর প্রতিটি পরতে৷ ফাটাকেষ্টর পুজো নিয়ে আজও সরগরম পুরো কলকাতা৷ এই পুজোর এত নামও সেই ফাটাকেষ্টর নামেই৷
এর আসল নাম কৃষ্ণচন্দ্র দত্ত। একসময় দুই প্রতিপক্ষের সাথে তার হয়েছিল এক ভীষণ ছুরির লড়াই। একলা তিনি সেই যুদ্ধে জিতে গেছিলেন বটে কিন্তু ছুরির কোপ লেগেছিল। চিকিৎসার জন্য ভরতি হতে হয়েছিল মেডিক্যাল কলেজেও। সুস্থ হয়ে আবার যখন ফিরে গেলেন নিজের পাড়ায়, ততক্ষণে নাম হয়ে গিয়েছে ‘ফাটাকেষ্ট’। ছুরির কোপ পড়ায় বদলে যায় তার নাম।
কলেজ স্ট্রিটের মোড়ে ফাটাকেষ্টর বাবার একটি পানের দোকান ছিল। দোকানের দেখভাল করতেন ফাটাকেষ্ট নিজেও। ছিলেন ভীষণ কালীভক্ত। ঠনঠনিয়া কালীবাড়ির কালী ঠাকুর দেখে তার মনে মাঝেমধ্যেই আসত মায়ের পুজো করার কথা। ১৯৫৫ সালে নিজেই শুরু করেন কালীপুজো। সেই পুজো শুরুর দিকে এত রমরমা ছিল না। প্রথমে পুজো শুরু হয়েছিল গুরুপ্রসাদ চৌধুরি লেনে। কিন্ত ক্রমে সেখানে পুজো করা নিয়ে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে হল মনোমালিন্য। ফলে সেখান থেকে পুজো সরিয়ে আনেন সীতারাম ঘোষ স্ট্রিটের একটি ঘরে। বছর দুই পরে রাস্তায় সেই পুজো শুরু হয়।
সত্তর দশকের কলকাতায় এই ফাটাকেষ্টর কালীপুজো ঘিরে তৈরী হয়েছিল এক বিশাল আয়োজন আর উন্মাদনা। নকশাল আন্দোলনের সময়ে ভীত আতঙ্কগ্রস্ত মধ্যবিত্ত গৃহস্থ দের পথচলা দায় হয়েছিল উত্তর কলকাতায়। সেখানে ফাটাকেষ্ট এসে দাঁড়ায় প্রায় রক্ষাকর্তার মতো। লোকমুখে শোনা যায় একদিকে যেমন তাঁকে নিয়ে বহু আতঙ্কের কাহিনী ঘুরে বেড়াতো, আবার অন্যদিকে তিনিই এলাকাবাসীদের বাঁচাতে সময়ে-অসময়ে সর্বদা উপস্থিত হয়েছিলেন। শোনা যায় কলকাতার রাস্তাঘাট এর ময়দানে বোমাবাজি, শুটআউট তার নিত্যসঙ্গী ছিল। আবার এই ফাটাকেষ্টই রাতের একলা বাড়ি ফেরা পাড়ার মেয়েদের রক্ষা করতে ছুটে যেতেন, নিজের লোকেদের সবসময় কড়া পাহারা দিতে বলতেন।
তাই তার মৃত্যুর প্রায় ৩০ বছর পরেও কলকাতার সীতারাম ঘোষ স্ট্রিটের বারোয়ারী কালী পুজো ‘ফাটাকেষ্টর পুজো’ নামেই বিখ্যাত। এক সময় কে আসেননি এই পুজোয়।
রাজেশ খান্না, বিনোদ খান্না থেকে উত্তম, সুচিত্রা এমনকি সিনেমার শুটিং করতে এসেই পুজোতে এক কালে এসেছিলেন খোদ অমিতাভ বচ্চন।
কালী মূর্তির গায়ের রং ঘন নীল। মাথা ভর্তি কোকড়া চুল। গা ভর্তি গয়না সজ্জিত মা। ফাটাকেষ্টর কালীর এই রূপ টেনেছে সকলকে।তবে আজও কলকাতার বারোয়ারি কালীপুজো বলতে মানুষ ফাটাকেষ্টর পুজোই বোঝেন।