শালগ্রাম শিলা বা নারায়ণ শিলা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের নিকট ভীষণ পবিত্র একটি শিলা। যেমন ভগবান মহাদেবের প্রতীক হিসাবে পূজিত হন শিবলিঙ্গ , তেমনই ভগবান বিষ্ণুর প্রতীক হিসেবে শালগ্রাম শিলার পুজো করা হয়ে থাকে। যে কোনো শুভ অনুষ্ঠানই হোক না কেন, নারায়ণ শিলা অবশ্যই লাগে গৃহ প্রবেশ হোক, কি বিয়ে , কি উপনয়ন। শিবলিঙ্গের মতো শালগ্রামেও সকল ঈশ্বরের পূজা করা যায়, কিন্তু এই নারায়ণ শিলায় শক্তিরূপে শবাসনা কোন দেবীর পূজা নিষিদ্ধ।
কিন্তু কি এই শালগ্রাম শিলা? কোথা থেকেই বা উৎপত্তি হয় নারায়ণ শিলার? জেনে নিন বিশদে।
শালগ্রাম শিলা বা Ammonite fossile নেপালের গণ্ডকী বা কালী নদীর এক বিশেষ প্রকারের জীবাশ্ম পাথর। আর কোনো শালগ্রাম শিলা পুজো করা যায় না , তাই গণ্ডকী নদীর শিলাই আসল শালগ্রাম শিলা। চিরতুষারাবৃত হিমালয় থেকে বয়ে আসে নেপালের এই গণ্ডকী নদী। হিমালয়ের শিলাস্তর পরিচিত “স্পিতি” শেল নামে। কালীগণ্ডকী নদীর জলের তীব্র স্রোতে ওই শিলাস্তরকে ধুয়ে মুছে ভেঙে নিয়ে আসছে এই নদীর জল। স্বচ্ছ অথচ কালো এই নদীর জলের স্রোতে ভেসে আসে স্পিতি শিলাস্তরের খাঁজে লুকিয়ে থাকা ইয়োসিন যুগের শেষ ভাগে, টেথিস সমুদ্র থেকে সৃষ্ট হিমালয়ের বহু প্রস্তরীভূত সামুদ্রিক জীবাশ্ম ও শীলা। আর এই বহু ধরনের শিলাভূত জীবাশ্মর মধ্যে একমাত্র “অ্যামোনাইট ফসিলের” গোষ্ঠীর শিলাভূত জীবাশ্মই” হল হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে পরম পবিত্র শালগ্রাম শিলা বা নারায়ণ শিলা।
শালগ্রাম শিলায় চিহ্নিত হয় চক্র। আকৃতি এবং রূপ অনুসারে নারায়ণ রূপে পূজিত এই শিলার বিভিন্ন নাম হয় , যেমন – শ্রীধর , দামোদর , লক্ষ্মী জনার্দন ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু নাম যাই হোক না কেন সকল শিলাই শালগ্রাম শিলা বলেই প্রচলিত। স্বয়ং ভগবান বিষ্ণু এই শিলায় অবস্থান করেন বলে শালগ্রাম শিলায় প্রাণ প্রতিষ্ঠার দরকার পড়ে না। প্রয়োজন পড়ে না ঈশ্বর কে আবাহন এবং বিসর্জনেরও। শিলার চক্র কোনো কারণে নষ্ট না হলে শালগ্রাম শিলা ভাঙ্গা টুকরো ফাটা হলেও পূজিত করতে কোনো সমস্যা নেই। নেপালের কালো গণ্ডকী নদী ভিন্ন নর্মদা তীরে এবং কচ্ছের কোন কোন জায়গায় শালগ্রাম শিলা পাওয়া যায়। কিন্তু, সেগুলির কোনোটিই হিন্দু ধর্ম অনুসারে পুজো করা যায় না। হিন্দু পুরাণে রয়েছে, হিমালয়ের দক্ষিণ দিকে গণ্ডকীর উত্তরে দশ যোজন বিস্তৃত অঞ্চল হল হরিক্ষেত্র। ভগবান বিষ্ণু শালগ্রাম শিলা রূপে এই স্থানে অবস্থান করছেন। তাই একমাত্র এখানে পাওয়া শালগ্রাম শিলাই পূজিত হন।