করোনা ভাইরাসের দাপটে গত বছর থেকে বিশ্বজুড়ে মানুষ সন্মুখীন হয়েছে এক নতুন ধরনের অবস্থার। যার নাম লকডাউন। মেনে চলতে হচ্ছে হোম কোয়ারেন্টিন (Home Quarantine)। কিন্তু করোনা আবির্ভাবের প্রায় সাড়ে তিনশ বছর আগে লক ডাউন করেছিল এই গ্রাম। গ্রামটির নাম ইয়াম।
ইংল্যান্ডের ডার্বিশেয়ারের কোলে ছোটো এই গ্রামটি প্লেগ গ্রাম নামেও বিশ্বের কাছে সুপরিচিত। ১৬৬৫ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডের এই ছোট্ট গ্রাম সারা বিশ্বের কাছে লকডাউনের অর্থ শিখিয়ে গিয়েছিল।
সেই সময় ইংল্যান্ডে প্লেগের প্রদূর্ভাব দেখা গেলেও শহর থেকে দূরের গ্রামগুলি তে সেই ভাবে এর প্রভাব পড়েনি। কিন্তু তাও প্লেগের হাত থেকে রক্ষা পায়নি এই গ্রাম। স্থানীয় দর্জি জর্জ ভিকারস অর্ডার অনুযায়ী কাপড়ের একটি বান্ডিল লন্ডন থেকে এই গ্রামে আনা হয়েছিল আর তার মাধ্যমেই প্লেগের জীবানু ইয়াম গ্রামে প্রবেশ করে। এক সপ্তাহের মধ্যেই আক্রান্ত হয়ে এই দর্জি মারা যান এবং পর পর আরও বেশ কয়েকজনের মৃত্যুর পরে গ্রামবাসীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। গ্রাম প্রধানের ব্যাপার টা বুঝতে অসুবিধা হয়নি । প্লেগ যে বিশ্বব্যাপী ভয়ানক মহামারীর আকার নিয়েছে সেই বিষয়ে তিনি অবগত ছিলেন। তাই অযথা দেরি না করেই গ্রামে রাতারাতি কড়া লকডাউন ঘোষণা করেন তিনি। গ্রাম প্রধান রেভারেন্ড উইলিয়াম মোম্পেসনের (Reverend William Mompesson) পরামর্শে এই প্লেগটি যাতে আশে পাশে এবং গ্রামের মধ্যে ছড়িয়ে না যায় সেজন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন।
যার মধ্যে ছিল কড়া ভাবে লকডাউন , হোম কোয়ারেন্টিনের নির্দেশ। গ্রামবাসীরা খাদ্য বা অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী একটি কুয়োর পাশে রেখে আসতো যেখান থেকে কয়েনের মাধ্যমে অন্য কেউ তা সংগ্রহ করতো। গোটা ইয়াম গ্রাম নিজেদের পুরোপুরি আলাদা করে ফেলেছিল। গ্রামবাসীরা নিজের বাড়ি থেকে বিশেষ বার হতেন না। পাশের গ্রামেগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ প্রায় কমিয়ে এনেছিল ইয়াম।
এমনকি কোনো পরিবারের কেউ মারা গেলে সেই পরিবারকেই তাকে সমাধিস্থ করতে হত। তাও গ্রাম থেকে কিছুটা দূরের এক কবরস্থানে। বর্তমানে এই গোটা গ্রামটি , সাথে সাথে এই কবরস্থানটি পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। প্রায় সাড়ে তিনশ বছর আগের এই প্রয়াস এই গ্রামটি থেকে আশে পাশের গ্রামগুলিতে রোগ ছড়িয়ে পড়তে দেয়নি। আজও এই গ্রামটি পৃথিবী কে পথ দেখায়