এই গল্প খুব সাধারণ ঘরের এক চপ বিক্রেতার। কিন্তু ৩০ বছর ধরে এই চপ বিক্রী করেই অসাধারণ হয়ে উঠেছেন তিনি। এই যুগে যখন অগ্নিমূল্য বাজার সেই অবস্থাতেও মাত্র ১ টাকা, হ্যাঁ ঠিকই পড়ছেন মাত্র ১ টাকায় বিক্রি করে চলেছেন চপ, সিঙ্গারা, ফুলুরি, বেগুনি। আর মাত্র ২ টাকা দরে বিকোচ্ছে ঘুগনি তার দোকানে! এই ভাবেই গত ৩০ বছর ধরে তার চপের দোকানের ব্যাবসা চালিয়ে আসছেন পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর থানার পাঁচড়ার তেলেভাজা বিক্রেতা হিমাংশু সেন। এলাকার সাধারন নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষ , এই দুর্মূল্য – এর বাজারে যাদের সেই ভাবে কিছু খেতে গেলে একশ বার ভাবতে হয় তাদের কথা মাথায় রেখেই এইরকম দাম নির্ধারিন করে ব্যাবসা করছেন তিনি। শুধু তাই নয় এই ব্যাবসা করেই রীতিমত বিত্তশালীও তিনি। তাই তার এই পথ দিশা দেখাচ্ছে ওই অঞ্চলের বেকারদেরও।
হিমাংশু বাবুর বিশ্বাস বর্তমান বাজারের কঠিন অর্থনৈতিক অবস্থাতেও ষোল আনা অর্থাৎ ১ টাকা পিস দরে ‘চপ’ বিক্রি করেও লাভবান হওয়া সম্ভব। কিন্তু কিভাবে? উত্তর জানিয়েছেন হিমাংশু নিজেই।
জানিয়েছেন রোজ প্রায় ১০ কেজি পরিমাণ বেসনের চপ, সিঙ্গারা, ফুলুরী বিক্রি হয় হিমাংশুবাবুর দোকানে। এর পাশাপশি লাগে ১ বস্তা আলু , ৫ কেজি পরিমাণ মটর, এবং প্রতিদিন প্রায় হাজার টাকার সর্ষের তেল ও নানা অন্যান্য সামগ্রী। হিমাংশু বাবু জানান, চপ তৈরীর সব উপকরন কিনতে দিনে তাঁর প্রায় ৩৫০০ টাকার মতো ব্যয় হয়।
১ টাকা পিস দরে চপ, সিঙ্গারা, তেলেভাজা আর ২ টা প্রতি প্লেট দরে ঘুগনি বিক্রি করেও তার রোজ প্রায় গড়ে ৫০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা লাভ থাকে। আর সেই লাভের পয়সাতেই তিনি নিজের সংসার চালিয়েছেন, ছেলেমেয়েদের করেছেন উচ্চশিক্ষিত, উঠিয়েছেন দোতলা বাড়িও।
হিমাংশু সেন জানান , এক সময় তাঁদের পরিবার আর্থিক ভাবে ভীষণ দুর্বল ছিল। রোজগারের আর কোনও পথ খুঁজে না পেয়ে হিমাংশু বাবুর পিতা বিশ্বনাথ সেন বহু বছর আছে বাড়ি পাশেই এক জায়গায় ৮০ পয়সা দরে চপের দোকান খুলে বসেন। সেই থেকেই চপের পসরা। বিগত ৩০ বছরে মাত্র ২০ পয়সা চপ, ফুলুরির দাম বাড়িয়েছেন হিমাংশু।
প্রতিদিন বিকেল ৩টের থেকে শুরু হয় তার চপের দোকান। চলে রাত ৯টা অবধি। দোকান খোলার সময় থেকেই বাড়তে শুরু করে খদ্দেরদের ভিড়। ভিড় সামলাতে হাত লাগান হিমাংশু বাবুর স্ত্রী বন্দনাদেবী, ছেলে কাশীনাথ এবং পুত্রবধূ শম্পা।
সামান্য মূল্যে বেশী পরিমাণ বিক্রী-ই তাঁর ব্যবসায়িক সাফল্যের মূল চাবিকাঠি বলে হিমাংশু সেন জানিয়েছেন।