বাঙালিদের শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো (Durga Puja 2021) শেষ হল। গত দুই বছর ধরে করোনা পরিস্থিতি চললেও তার মধ্যেই পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে কিছুটা আনন্দ পেতে আত্মীয়, বন্ধু, প্রিয়জনের সঙ্গে দুর্গাপুজোর উৎসবে মেতে উঠেছেন মানুষ। হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী দুর্গাপুজোর বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে এই পুজোর প্রত্যেকটি রীতি নীতির আলাদা আলাদা অর্থ রয়েছে। সাথে রয়েছে আলাদা আলাদা ব্যাখ্যা। মহালয়ার দিন রেডিওতে চণ্ডী পাঠের সাথে সাথেই যেন পুজোর ঢাকে কাঠি পরে যায়। দিন গোনা শুরু হয়ে যায় ষষ্ঠীর বোধন থেকে অষ্টমীর অঞ্জলীর। ষষ্ঠী, সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী এবং দশমী। দুর্গাপুজোর প্রতিটা দিনের রীতি নীতি রেওয়াজের আলাদা আলাদা গুরুত্ব রয়েছে।
মহাষষ্ঠী থেকে মহানবমী আমরা তিথির আগে ‘মহা’ শব্দটা উচ্চারিত করি। কিন্তু দশমীর দিন দশমী তিথির আগে ‘বিজয়া’ বসিয়ে শুভ বিজয়ার শুভেচ্ছা জানাই। পাশাপাশি বিজয়ার দিনে আমাদের বাঙালি মেয়ে বউরা মেতে ওঠে সিঁদুর খেলায়। বিজয় দশমীর দিন মহিলারা লাল সাদা শাড়ী পরে সিঁদুর খেলার মাধ্যমে আনন্দে মেতে ওঠেন। এর মাধ্যমে তাঁরা তাদের বিবাহিত জীবন এবং স্বামীর মঙ্গল কামনা করেন। কিন্তু এই সিঁদুর খেলা রীতির ইতিহাস এবং তাৎপর্য কি জানেন?
বাঙালিদের মধ্যে সিঁদুর খেলার প্রচলন কিভাবে হল সেই বিষয়ে এখনও সঠিক ভাবে জানা যায়নি। তবে প্রচলিত ধারা অনুসারে, গৃহিণীদের মধ্যে স্বামীর মঙ্গলকামনার রেওয়াজ চালু করার জন্য জমিদার বাড়ির দুর্গা পূজায় প্রায় ২০০ বছর আগে এই সিঁদুর খেলার রীতি শুরু হয়েছিল। আরেকটি অন্য তত্ত্ব অনুসারে, সিঁদুর খেলার এই ঐতিহ্য দুর্গা পূজার মতই পুরানো। ধারণা করা হয়ে এই রীতি প্রায় ৪০০ বছর পুরানো। সাধারণভাবে প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, যদি কোনও মহিলা সঠিক রীতি এই দিন নিজের এবং অন্যান্য সধবাদের মাথায় সিঁদুর তুলে দেন অর্থাৎ সিঁদুর খেলেন তাহলে তিনি কখনই বিধবা হবেন না। কেনোনা হিন্দু ধর্ম অনুযায়ী সিঁদুরদান একটি লৌকিক আচার।
ভবিষ্য পুরাণে অনুযায়ী, সিঁদুর স্বয়ং ব্রহ্মার প্রতীক। হিন্দু বিবাহিত মহিলারা সিঁথিতে সিঁদুর দিয়ে পরম ব্রহ্মকেই মনে মনে আহ্বান ডাকেন। গীতাতেও কাত্যায়নী ব্রত পালন করতে গোপিনীদের সিঁদুর খেলার বর্ণনা পাওয়া যায়। যদিও তা ছিল কৃষ্ণের মঙ্গল কামনায়। মনে করা হয় সিঁদুর যা পরমব্রহ্ম এর প্রতীক সংসারের সকল কষ্ট নিবারণ করেন। দেবী রূপে দুর্গা পূজিত হলেও যখন তিনি বিদায় নেন, তখন তো উমা ঘরের মেয়ে। আর এই বরণের সময় নতুন বস্ত্র পরিধান করতে পারলে সবচেয়ে ভালো। নইলে অবশ্যই পরিষ্কার শুদ্ধ কাপড় পরতে হয়।