বিয়ের সময় সাত পাঁক ঘুরে আমরা নানা রকম পণ গ্রহণ করি যার মধ্যে থাকে একে অপরের প্রতি দায় বদ্ধতা, বিবাহের মর্যাদা রাখা ইত্যাদি নানা শপথ। সাত পাকে বাঁধা এই কারণেই বলা হয়। সনাতন ধর্মের বিবাহে এই সাতপাঁকের মধ্যে দিয়েই লাভ করে জন্ম জনামন্তরের বন্ধন। কিন্তু সম্প্রতি উত্তর প্রদেশের একটি বিয়েতে যেখানে আইএএস অফিসার প্রশান্ত নাগর বিয়ে করেছিলেন তিনি সাতপাকের জায়গায় আট পাঁক নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এই অষ্টম পাঁকে তিনি নিজে এমন একটি শপথ বাক্য পাঠ করেন যার মাধ্যমে তিনি নিজে দেশের এবং সমাজের জন্য একটি এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন যা অনন্য। তিনি শুধু নিজের বিবাহের এবং স্ত্রীর প্রতি দায়বদ্ধতারই শপথ বাক্য পাঠ করেন নি। তিনি পাঠ করেছেন নিজের দেশের আর সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতার পাঠ। যেখানে ভারতের বেশিরভাগ সরকারী অফিসারদের নানা ধরনের করাপশন সংক্রান্ত ঘটনার খবর বার বার সামনে এসে সেখানে প্রশান্ত নাগর সমাজকে এক আলাদা পথ দেখিয়েছেন। প্রশান্ত নাগর বর্তমানে অযোধ্যায় জয়েন্ট মেজিস্ট্রেট পদে নিযুক্ত আছেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে তার বিয়ের আট পাঁক নিয়ে চর্চায় আছেন।
প্রশান্ত আর মনিষার বিয়ে করোনা আবহে লকডাউনের সময় হওয়ায় কঠোর সামাজিক বিধিনিষেধের মধ্যেই সম্পূর্ন নিয়ম মেনে তাঁদের বিয়ে সম্পন্ন হয়। বরযাত্রীতে মাত্র ১১ জন ছিলেন। বিয়ে পুরো হিন্দু রীতি নীতি মেনে হলেও বিয়েতে সাত পাক ঘোরার বদলে তাঁরা আট পাক ঘোরেন। আট পাকে প্রশান্ত এক জন আইএএস অফিসার হিসাবে প্রতিজ্ঞা নেন যে তিনি কোনোদিন কারো থেকে ঘুষ নেবেন না।
এমন একজন দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী অফিসার প্রশান্ত নাগরের মা এই বছর মে মাসে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান। প্রশান্ত এর বাবা পণ প্রথার বিরোধী। তিনি যেমন ছেলের বিয়েতে মেয়ের বাড়ি থেকে কিছু নেন নি। তেমনই রণজিৎ বাবু অর্থাৎ প্রশান্ত নাগরের বাবা নিজের মেয়ের বিয়েতেও ছেলের বাড়ীতে কোনো রকম পণ দেননি।
নিয়ম রক্ষার্থে বর পক্ষ এর থেকে মাত্র ১০১ টাকা আশীর্বাদ স্বরূপ স্বীকার করেন। আসলে তার বাবা রণজিৎ নাগর মনে করেন বিয়েতে অতিরিক্ত বাজে খরচ না করে সেই টাকায় দরিদ্র পরিবারের মেয়ের বিয়ে দিয়ে সাহায্য করা উচিত। যার পিতার এমন চিন্তাধারা তার সন্তান প্রশান্ত বাবুর যে আলাদা হবেন সেটাই স্বাভাবিক।