মেয়েরা অবহেলার পাত্রী নয়, সংসারে কন্যা-সন্তানই হল লক্ষ্মী! প্রচলিত এই কথাকেই বাস্তবায়িত হল মঙ্গলবার। কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোয় (Lakshmi Puja 2021) নিজের মেয়েকে লক্ষ্মীরূপে পুজো করে অনন্য নজির গড়লেন নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জের শ্যামনগর গ্রামের বাসিন্দা দেবাশিস বিশ্বাস ও তাঁর স্ত্রী মিতালী বিশ্বাস।
স্থানীয় পঞ্চায়েত কর্মী দেবাশিস বিশ্বাস ও মিতালি বিশ্বাসের একমাত্র কন্যা বছর দশেকের দেবাদৃতা। এদিন লক্ষ্মী সেজে এক হাতে পদ্ম আর অন্য হাতে কলস নিয়ে রাজসিংহাসনে বসে একেবারে পুরোহিতের হাত থেকে পূজিত হলেন দেবাদৃতা। আর জ্যান্ত লক্ষ্মীপুজো করে নিজেকে ধন্য মনে করছেন পুরোহিত শ্যামল মুখোপাধ্যায়ও। তিনি বলেন, ‘সকল মেয়েই মায়ের মত। তাই সাক্ষাৎ দেবী লক্ষ্মীকে এখানে পুজো করা হল।’ দুর্গাপুজোয় যেমন কুমারী পুজো হয়, ঠিক তেমনই কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোয় কুমারী লক্ষ্মীর পুজো করে অনন্য নজির গড়ল কৃষ্ণগঞ্জের বিশ্বাস দম্পতি।
যদিও মেয়েকে লক্ষ্মীরূপে পুজো করার বিষয়ে একেবারে গোড়ায় পরিবারের সম্পূর্ণ সমর্থন পাননি দেবাশিস। তিনি জানান, মেয়েকে লক্ষ্মীরূপে পুজো করার কথা বাড়িতে বললে প্রথমে পরিবারের সকলে অবাক হয়ে যায়। তবে সেভাবে কেউ আপত্তি করেনি। ফলে মেয়েকে পুজো করার ব্যাপারে দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিলে পরিবারের অন্যান্যরাও সমর্থন জানান। নাতনিকে লক্ষ্মী রূপে পুজো করে বৃদ্ধ ঠাকুমা দেবাদৃতাকে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করতে গিয়ে কেঁদেই ফেললেন। আর ঠাকুরদা বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না, তাঁদের প্রিয় আদরের নাতনি সাক্ষাৎ লক্ষ্মী রূপে পূজিত হচ্ছে। কৃষ্ণগঞ্জের শ্যামনগর গ্রামে জ্যান্ত লক্ষ্মীকে দেখতে গ্রামের অনেক মানুষ ভিড় জমিয়েছিল বিশ্বাস বাড়িতে। মা, বাবা থেকে শুরু করে দাদু, ঠাকুমা এমনকি পিসিও জ্যান্ত লক্ষ্মীর চরণে পুষ্পাঞ্জলী দিয়ে নিজেদের ধন্য মনে করলেন।
দেবাশিসবাবু বলেন, সংসারে কন্যাই হল লক্ষ্মী। আর তাই লক্ষ্মী জ্ঞানে নিজের মেয়েকেই আমরা পুজোর আসনে বসালাম। নিজের মেয়েকে লক্ষী রূপে পুজো করে সমাজের দৃষ্টান্ত স্থাপন করার পাশাপাশি পরোক্ষে সমাজের প্রতি এই বিশ্বাস দম্পতির বার্তা – কোন কন্যাকেই অবহেলা নয়। বরং কন্যা সন্তান লক্ষ্মী রূপে পূজিত হোক সকল ঘরে ঘরে।