বর্তমান সময়ে কর্মব্যাস্ত, দ্রুত জীবন যাত্রার জন্য আর অত্যধিক মানসিক চাপ নিতে নিতে ইনসোমনিয়া বা অনিদ্রা মানুষের জীবনে একটি সাধারণ সমস্যায় পরিণত হয়েছে। অনেকেই বলেন সারাদিন কর্মব্যস্ততার পরও ক্লান্ত হলেও রাতে সহজে ঘুম আসে না। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলে মানুষের দিনের মধ্যে অন্তত ৬ ঘণ্টার ঘুম প্রয়োজন। তবে একেবারে নিদ্রাহীন মানুষের কথা আগে শুনেছেন কখনও! যার চোখে কখনও ঘুমও আসে না। এক দু দিনের জন্য নয় গত ৪০ ধরেই তার চোখে ঘুম নেই। কতটা অদ্ভুত বিষয় ভেবে দেখুন একবার।
বিশ্বাস করার মত না হলেও বিস্ময়কর এই মহিলা রয়েছেন আমাদের বিশ্বেই। যার কথা শুনলেই অবাক লাগে! বিস্ময়কর এই মহিলা বাস করেন চিনের হেনান প্রদেশে। এই অবাক করা বিষয়টি সম্প্রতি চীনা গণমাধ্যম প্রকাশ্যে এনেছে। চীনের এক সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনে জানানো হয়, চীনের হেনান প্রদেশের বাসিন্দা লি ঝানাইং টানা ৪০ বছর ধরে এক মিনিটের জন্যও নিজের দু চোখের পাতা জুড়তে পারেনি অর্থাৎ একদমই ঘুমাতে পারেননি। তিনি নিজে জানিয়েছেন সর্বশেষ ৫-৬ বছর বয়সে ঘুমিয়েছিলেন তিনি! ৪৫ বছর বয়সী লি ঝানাইং বিগত ৪ দশক ধরে একটুও ঘুমাননি। কিন্তু যেখানে এক দিন ঘুম না হলেই আমাদের পরের দিন ক্লান্ত লাগে, শরীর খারাপ করে সেখানে তিনি না ঘুমিয়েও দিব্যি তরতাজা ও শারীরিকভাবে সুস্থ আছেন। এমনটা কি করে সম্ভব!
লি ঝানাইংয়ের স্বামী লিউ সুকুইন তার স্ত্রীর একেবারে না ঘুমনোর বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, বিয়ের পর থেকেই তিনি তার স্ত্রীকে একদিনের জন্যও ঘুমাতে দেখেননি। ঘুম না আসার কারণে তার স্ত্রী রাতের বেলা ঘরের কাজ কর্ম করেন বলে জানিয়েছেন লিউ সুকুইন। শুরুর দিকে যাতে তার স্ত্রীর ঘুম আসে এই জন্য ঘুমের ওষুধও কিনে আনতেন লিউ সুকুইন। তবে সেসব ওষুধে কোনো কাজই হয়নি।
নিজের এই অদ্ভুত অনিদ্রার সমস্যা নিয়ে গত কয়েকবছরে অনেকবার চিকিৎসকের কাছে গিয়েছিলেন লি ঝানাইং। তবে কোনো চিকিৎসকই তার মধ্যে অস্বাভাবিক কিছুই খুঁজে পাননি। তবে সম্প্রতি বেইজিংয়ের একটি মেডিকেল সেন্টারের চিকিৎসকদের একটি টিম এই মহিলার গত ৪০ বছর ধরে না ঘুমানোর রহস্যের সমাধান করেছেন।
লি ঝানাইং কে মেডিকেল সেন্টারের ডাক্তাররা একটি টিম গঠন করে বিশেষ সেন্সরের সাহায্যে টানা ৪৮ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণের মধ্যে রেখেছিলেন। ৪৮ ঘণ্টা টানা লি ঝানাইংয়ের ব্রেনওয়েড পর্যবেক্ষণ করে চিকিৎসকরা জানতে পারেন তিনিও আসলে ঘুমান। তবে তার ঘুম বাকি সাধারণ মানুষের মতো নয়। সাধারণ মানুষ যেমন চোখ বন্ধ করে নিদ্রা যায় সেই ক্ষেত্রে লি’র বিষয়টি সম্পূর্ন বিপরীত। অর্থাৎ লি ঝানাইং চোখ বন্ধ করে নয় জেগে ঘুমোয়। এমনকি অন্যের সাথে কথা বলা বা কাজ করার মধ্যেও ঘুমাতে পারেন। চিকিৎসকরা এই ঘটনাটিকে ‘জেগে ঘুমানো’ বলে বর্ণনা করেছেন।
অনেকেরই স্লিপ ওয়াকিং বা ঘুমের মধ্যে হাঁটার অভ্যাস থাকে। সেই রকমই লি ঝানাইংয়ের বিষয়টিও। বাইরে থেকে দেখলে লাগবে তিনি সারাদিন জেগে আছেন। আসলে জেগে জেগেই তিনি ঘুমান। কিন্তু তার নার্ভ ও হাত পা ঘুমের মধ্যেও সক্রিয় থাকে। এই কারণে ঘুমের বিষয়টি লি নিজেও বুঝতে পারেন না। কিন্তু ঘুমের ব্যাবধান খুব কম। তবুও তিনি শারীরিকভাবে সুস্থ্য, যা সত্যিই রহস্যজনক।