নিরমা… ওয়াশিং পাউডার নিরমা বিজ্ঞাপনটা মনে আছে? সাদা কালো টেলিভিশনের যুগ থেকেই এই একটি বিজ্ঞাপনের দৌলতে সবার মুখে মুখে ঘুরত এই গান। কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছিল নিরমার বিক্রী। ওয়াশিং পাউডার নিরমার প্যাকেটে সাদা ফ্রক পরে ছিল একটি বাচ্চা মেয়ের ছবি, সকলেরই কাছে সেই বাচ্চা মেয়েটির ছবি নিরমা গার্ল হিসাবেই পরিচিত। কিন্তু জানেন কি এই নিরমা গার্ল – এর আসল কাহিনী? এক বাবা তার ছোট্ট মেয়ের স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন? গুজরাটের কারশানভাই চেয়েছিলেন তাঁর ছোট্ট মেয়েটির একদিন অনেক বড় হবে। কিন্তু একটি দুর্ঘটনা তার মেয়েকে তার কাছ থেকে কেড়ে নেয়। তবে তিনি চেয়েছিলেন তার মেয়ের স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে। তাই তিনি খুলে ফেললেন একটা ডিটারজেন্ট পাউডারের কোম্পানি। মেয়ে ‘নিরুপমা’র নাম থেকেই কোম্পানির নাম রাখলেন ‘নিরমা’ (nirma)।
কিন্তু এই নিরমা একদিনে আজকের জায়গা পায়নি। কোম্পানি গড়ে ওঠার পেছনেও রয়েছে অনেক লম্বা ইতিহাস। ১৯৬৯ সালে গুজরাতের ব্যবসায়ী কারশানভাই প্যাটেল এই নিরমা ডিটারজেন্ট পাউডারের ব্যবসা শুরু করেন তাঁর প্রিয় ছোট মেয়ে নিরুপমার স্মৃতিতে। ততদিনে একটি দুর্ঘটনা তার মেয়েকে কেড়ে নিলেও, মেয়েকে সারাজীবন স্মৃতির খুব কাছেই রাখতে চাইলেন বাবা কারশানভাই। তাই মেয়ের নাম থেকেই ডিটারজেন্ট পাউডারের নাম ‘নিরমা’ রেখে শুরু হল ব্যাবসা।
তিনি এই ব্যাবসা শুরু করার সময় চাকরী করতেন আমদাবাদে ভূতত্ত্ব ও খনি দফতরের অধীনে। অবসর সময়ে সাইকেলে করে সকাল বিকেল বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিজের এই ডিটারজেন্ট পাউডার বিক্রি করতেন। কিন্তু সেইসময়ে এই ডিটারজেন্ট পাউডার নতুন আর পরিচিতি না থাকার কারণে খুব একটা বিক্রী হত না। তখন নিজের ব্যবসায়িক বুদ্ধি প্রয়োগ করে ডিটারজেন্ট পাউডারের দাম রাখলেন প্রতি কেজি মাত্র ৩ টাকা। এরপর থেকেই বেশ রমরমিয়ে চলতে শুরু তাঁর ব্যবসা।
কিন্তু অফিসে আর ব্যবসা দুই চালানো অসুবিধার হয়ে যায়। তাই তিনি এক সাহসি পদক্ষেপ নিয়ে চাকরী ছেড়ে দিয়ে আরও কয়েকজন লোক নিয়ে এই নিরমা ডিটারজেন্ট পাউডারের ব্যবসা আরও প্রসারিত করার চিন্তাভাবনা শুরু করলেন। এক বিজ্ঞাপনী সংস্থাকে এই ওয়াশিং পাউডারের প্যাকেটের উপর আজকের আইকনিক ‘নিরমা গার্ল’-র একটি ছবি আঁকার জন্যে বরাত দেন। নিজের মেয়ের নামে যেহেতু ডিটারজেন্ট পাউডারের নাম, সেই কারণে প্যাকেটের উপর একটি মেয়ের ছবিই আঁকতে বলেন তিনি। এক বাঙালি ইলাস্ট্রেটরের ধীরেন্দ্রনাথ শূরের তুলির ছোঁয়ায় রূপ পায় ‘নিরমা’র ছবি।
কিন্তু ব্যাবসা বাড়াতে গিয়ে সমস্যা দাড়ালো, দোকানদাররা ডিটারজেন্ট পাউডার নাইট ধারে, আর ঠিক সময়ে বকেয়া টাকা মেটাতেন না। এর ফলে তাঁর পুঁজিতেও ঘাটতি পড়তে থাকে। আবারও এক ব্যাবসায়ী বুদ্ধি লাগান তিনি। আহমেদাবাদের দোকান থেকে সমস্ত ডিটারজেন্ট পাউডার তুলে নেন কারশানভাই। আর নিয়ে আসেন টিভিতে নিরমা’র বিজ্ঞাপন। সেইসঙ্গে ব্যাকগ্রাউন্ডে সেই আইকনিক গান বাজতে থাকে ‘ওয়াশিং পাউডার নিরমা… ওয়াশিং পাউডার নিরমা! দুধ সি সাফেদি, নিরমা সে আয়ি…রঙিন কাপডা ভি খিল খিল যায়… সবকি পসন্দ নিরমা’। আর এই গান পায় বিপুল জনপ্রিয়তা। সকলের মুখে মুখেই যেন প্রচার পায় এই ডিটারজেন্ট পাউডার, তেমনই এই সার্ফের চাহিদাও বাড়তে থাকে সব দোকানে। এইভাবে একদিকে যেমন কোম্পানিও বড় মাপের হয়ে উঠল, তেমনই এই ডিটারজেন্টের কোম্পানি নিরমার মধ্যে দিয়ে তাঁর মেয়ের স্মৃতিও বেঁচে থাকল।