আজ হিরোশিমা দিবস। ৭৬ বছর আগে এই দিনেই পৃথিবীর যুদ্ধের ইতিহাসে প্রথম পরমাণু বোমার হামলায় কেঁপে উঠেছিল জাপানের হিরোশিমা শহর। পুরো পৃথিবীতে তখন বাজছে বিশ্বযুদ্ধের দামামা। ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট জাপানের হিরোশিমা শহরে প্রথম পারমাণবিক বোমা হামলা চালায় আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র। নিমেষেই কার্যত নিশ্চিহ্ন হয়ে শ্মশান হয়ে গেছিল গোটা শহর। সেই বোমার আঘাতের বিভৎসতাকে স্মরণ করতেই প্রতিবছর এই দিনটিকে হিরোশিমা দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
৬ই আগস্ট, স্থানীয় সময় তখন সকাল ৮টা বেজে ১৫ মিনিট। আগেই নির্দেশ দেওয়া ছিল তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যানের তরফে। সেই নির্দেশ মতই মার্কিন সেনাবাহিনী ইনোলা গে (Inola Gay) নামের যুদ্ধ বিমান নিয়ে হামলা চালায়। যে পরমাণু বোমাটি হিরোশিমা শহরের উপর নিক্ষেপ করা হয়েছিল তাকে মার্কিনিরা তার নাম দিয়েছিল ‘লিটল বয়'(Little Boy)।
কিন্তু এখানেই শেষ হয়নি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বোমার তাণ্ডব। এই পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপনের ঠিক তিন দিন পর ৯ অগাস্ট আমেরিকান বোমারু বিমান দ্বিতীয় পরমাণু বোমাটি বর্ষণ করেছিল নাগাসাকিতে।
আজ সেই পরমাণু হামলার ৭৬ বছর পেরিয়ে গেছে উদিত সূর্যের এই দেশটি। উন্নত থেকে উন্নততর দেশের শিরোপা লাভ করেছে জাপান। তবু, এখনও ৭৬ বছর আগের সেই ধ্বংসলীলার সাক্ষ বহন করে চলেছে এই দেশ। আজ হিরোশিমা দিবসে (Hiroshima Day) তাই জাপানের বহু মানুষ আছেন যারা সেদিনের সেই পারমাণবিক বোমার বিভৎসতাকে মনে করেই আতঙ্কে কেপে ওঠেন।
এই পারমাণবিক বোমার আঘাতে ঠিক কত জনের মৃত্যু হয়েছিল তা এখনও পর্যন্ত গোটা পৃথিবীর কাছেই অজানা। বলা হয় ৮০ হাজারের কাছাকাছি মানুষ মারা গেছেন বোমা পড়ার সাথে সাথেই। জাপান সরকারের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী হিরোশিমাতেই নাকি ১ লক্ষ ৪০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। এবং ৯ অগাস্ট নাগাসাকিতে মারা যান ৭৪ হাজার মানুষ। আহত হয়েছিলেন আরো বহু অগুন্তি মানুষ। শুধু তাই নয় প্রচুর ঘরবাড়ি থেকে শুরু করে রাস্তা ঘট, গাছ-গাছারি– হিরোশিমা শহরের পুরো নির্মাণ কাঠামোর বিস্তর ক্ষতি হয়েছিল। জাপানের সরকারি তথ্য অনুযায়ী, এই আঘাতে হিরোশিমার ৬৫ শতাংশ বিল্ডিং ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।
সেই দিনের ভয়াবহতা প্রত্যক্ষ করা এক ব্যক্তির বর্ণনায়, একটি হলুদ, খয়েরী এবং কমলা রংয়ের তীব্র আলো দেখা যায় আকাশে। সেই আলো যেন মুহূর্তের মধ্যেই শেষ করে দিয়েছিল সবকিছু। মুহূর্তের মধ্যে যেন গ্রাস করে ফেলেছিল আস্ত একটি শহরকে। জাপানের দুই শহরে এই ভয়াবহ হামলার পরই রাতিরাতি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে ইতি। ১৫ই আগস্ট আত্মসমর্পণ করে জাপান।
পারমাণবিক বোমার তাপ এবং তেজষ্ক্রিয় রিঅ্যাকশনের ফলে পরবর্তী বেশ কয়েক বছর পর্যন্ত অনেক মানুষের মৃত্যু হয়েছিল সেখানে। এমনকি সেদিনের সেই পরমাণুর ভয়াবহতা থেকে যারা কোনোক্রমে বেঁচে গিয়েছিলেন, তাঁদের অধিকাংশই শরীরে নানা ধরণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আর সমস্যা দেখা দেয়। তারা বহন করে চলেছেন তেজস্ক্রিয়তার অভিশাপ। এমনকী, পরবর্তী প্রজন্ম এও যারা জন্মেছেন তাঁদের অনেকের দেহেই রয়েছে তেজস্ক্রিয়তা জনিত বিকৃতি। এদের পৃথিবী চেনে ‘হিবাকুশা’ নামে।