আজ গুরুপূর্নিমা! প্রাচীন কাল থেকেই বিশেষ রীতিতে গুরুর পুজো করার জন্যই এই দিনটি পালিত হয়। আষাঢ় মাসের পূর্ণিমায় এই বিশেষ তিথিতেই পালিত হয় গুরুপূর্নিমা। কখনও কখনও এই পূর্ণিমা শ্রাবণ মাসে পড়ে যায়৷ ২০২১ সালের ২৪শে জুলাই এই বিশেষ তিথি পালিত হতে চলেছে। গুরুপূর্নিমার দিন বহু দীক্ষিত মানুষরা নিজের গুরুকে বিশেষভাবে পুজো এবং শ্রদ্ধা অর্পণ করেন। রইল এই দিনটি সম্পর্কে কিছু তথ্য , তাৎপর্য ও এই বিশেষ দিনটির মাহাত্ম্য।
সংস্কৃত গুরু শব্দটি, ‘গু’ এবং ‘রু’ এই দুটি শব্দ মিলিয়ে তৈরী হয়। ‘গু’ শব্দের অর্থ সংস্কৃতে অন্ধকার বা অজ্ঞতা এবং সংস্কৃতে রু শব্দের অর্থ হচ্ছে আলো। অর্থাৎ যার হাত ধরে আমরা অন্ধকার থেকে আলোয় যাই তিনিই গুরু। মনের অজ্ঞানতার অন্ধকারকে দূর করে নিজের শিষ্যকে আলোর পথ দেখান গুরু।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন, এই পূর্ণিমা তিথিতেই মুণি পরাশর ও সত্যবতীর কোলে জন্মগ্রহণ করেছিলেন মহর্ষি বেদব্যাস। মহাভারত এবং শ্রীমদ্ভগবৎ রচনা করা ছাড়াও তিনি চতুর্বেদের সম্পাদনা ও পরিমার্জনা করেন, এছাড়াও ১৮ টি পুরাণ রচনা করেন। তাই এই পূর্ণিমা কে ব্যাস পূর্ণিমাও বলা হয়ে থাকে।
আবার হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী মহাদেব হলেন আদি গুরু। সপ্তর্ষির সাতজন ঋষি – অত্রি, বশিষ্ঠ, পুলহ, অঙ্গীরা, পুলস্থ্য, মরীচি এবং ক্রতু হলেন তাঁর প্রথম শিষ্যগণ। আদিযোগী শিব এই পূর্ণিমা তিথিতেই আদিগুরুতে রূপান্তরিত হন। এবং সপ্তর্ষির সাত ঋষিকে মহাজ্ঞান দান করেন। এই কারণে এই তিথি হল গুরুপূর্ণিমা
বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মধ্যেও গুরুপূর্ণিমার গুরুত্ব অসীম। বলা হয়, ভগবান বুদ্ধ বোধিজ্ঞান লাভের পরে আষাঢ় মাসের পূর্ণিমায় সারনাথে প্রথম শিষ্যদের উপদেশ দেন। নেপালেও আজ গুরুপূর্নিমা পালিত হয়।
প্রাচীনকাল থেকেই ভারতবর্ষে গুরুদের সম্মানজনক স্থান দেওয়া রয়েছে। বলা হয় গুরুর দেখানো পথে চললে, কোনও ব্যক্তি জ্ঞানের আলো, শান্তি, আনন্দ এবং মোক্ষ লাভ করতে পারেন। তাই গুরুর উদ্দেশে শ্রদ্ধা জানাতে বৈদিক যুগ থেকেই গুরু পূর্ণিমার রীতি পালিত হয়ে আসছে। পুরাণ অনুসারে এই পূর্ণিমায় গুরুর পূজার্চনা ও শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করলে অক্ষয় আশীর্বাদ মেলে।