আমেরিকার সেনা সরতেই ফের গোটা আফগানিস্তানের দখল নিয়ে নিয়েছে তালিবান। গোটা পৃথিবীতে এখন চর্চা তাই নিয়ে আর আফগানিস্তানের বুকে ছড়িয়েছে আতঙ্ক। তালিবানদের অত্যাচারের ভয়ে দেশ ছেড়ে পালাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে মানুষ। হাজারে হাজারে মানুষ ভীড় জমিয়েছে বিমানবন্দরে। বিমানে উঠতে চাইছেন শয়ে শয়ে আতঙ্কিত মানুষ। প্রাণও হারাচ্ছেন। অথচ ঠিক এই সময়ে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের হয়েও রত্তন নাথ মন্দিরের পুরোহিত রাজেশ কুমার পালাতে নারাজ। প্রাণের ভয় তুচ্ছ করে তিনি আগলে আছেন কাবুলের হিন্দু মন্দির।
মার্কিন সেনা সরিয়ে নিতেই রাতারাতি কাবুলের চিত্রটা পাল্টে গেছে। সেখানে আবার কায়েম হচ্ছে কঠোর ইসলামিক তালিবানি শাসন। আর এই কারণেই আতঙ্কে রাত কাটাচ্ছে আফগান নাগরিকরা। মধ্যযুগীয় ধর্মীয় গোঁড়ামি আর মৌলবাদী উগ্রপন্থা মিলেমিশে যে শাসন আর অত্যাচারের শিকার হয়েছিল সাধারণ আফগানিরা, বিশেষত মহিলারা। সেই অন্ধকারের দিনগুলোর কথা মনে করেই শিউরে উঠেছেন আফগানরা। উল্লেখ্য তালিবানদের মতো উগ্রপন্থী ইসালীম সংগঠন আফগানিস্তানে ক্ষমতা কায়েম করলে যে সেদেশে থাকা সংখ্যালঘুদের দুরাবস্থা বাড়বে, এমনকী প্রাণের সংশয়ও যে হতে পারে সেকথা আগেই বুঝতে পারছিলেন সকলে। কেউ কেউ বিমানে চাকা ধরে ঝুলতে ঝুলতেও পালাতে চেয়েছিলেন। যার অবশ্যম্ভাবী পরিণতি হয়েছে মৃত্যু।
এমন অবস্থায় ও মৌলবাদী উগ্রপন্থা কে বিন্দুমাত্র ভয় না পেয়ে নিজের অবস্থানে অনড় পুরোহিত রাজেশ কুমার। শান্ত ও নির্ভীক পণ্ডিত রাজেশ কুমার আফগানিস্তানের কাবুলের মন্দির রত্তন নাথের পুরোহিত। তালিবানদের দখলে নেওয়া আফগানিস্তানে আটকে থাকা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের হিন্দু ও শিখ মানুষের জন্য ইতিমধ্যেই সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে ভারত। তাদের উদ্ধার করতে সচেষ্ট ভারতের প্রশাসন। তালিবানরা পৌঁছানোর আগেই তাঁকেও পালাবার পরামর্শ দেন আশেপাশের আফগানিরাও। এমনকী যাতে সে তার প্রাণের সুরক্ষা করতে পারে সেই জন্য আত্মগোপন করারও ব্যবস্থাও করে দিতে চেয়েছিলেন সেই দেশের অনেকে। কিন্তু কাবুলের রত্তন নাথ মন্দিরের সেবায় কেটে গিয়েছে তাঁর পূর্বপুরুষদের জীবনে, তা ছেড়ে যেতে নারাজ রাজেশ কুমার। তিনি মন্দির আগলেই পড়ে থাকবেন। এর ফলে যদি তালিবানের গুলিতে তার জীবন দিতে হয় তাও সই। তিনি মনে করবেন, মন্দির আগলে জীবন দেওয়াই ছিল ঈশ্বরের উদ্দেশে তাঁর সেবা।
হিন্দু বা অন্যান্য সংখ্যালঘু ধর্ম নিয়ে অতীতে তালিবানরা কি মতামত পোষণ করতো তা কারো অজানা নয়। বামিয়ানের বুদ্ধমূর্তি ধ্বংস হয়েছিল তাদেরই হাতে সেখানে এই রতন নাথ মন্দির ও তার পুরোহিতের ভবিষ্যৎ কী হবে, এই বিষয়ে কেউই কিছু নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না। কিন্তু তিনি যেভাবে মন্দির আগলে পড়ে আছেন, এই সাহসকেই কুর্নিশ জানাচ্ছেন বিশ্বের মানুষ।