সন্তান দেরিতে জন্মানো বা তাতে অনেক দেরি হওয়া ধীরে ধীরে ভারতীয় সমাজের একটি বড় সমস্যা হয়ে উঠছে। বিশেষ করে আধুনিক শহুরে জীবনে এই সমস্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেক সময় স্বাস্থ্যজনিত কারণে এ সমস্যা দেখা দেয়, কখনো স্বামী-স্ত্রী নিজেরাই সন্তান ধারণে উদাসীন। বিলম্ব করে সন্তান নিতে, আবার কখনো আজীবন সন্তান না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এমতাবস্থায় নাতি-নাতনির অপেক্ষায় বসে থাকা দম্পতির বয়স্ক বাবা মা ভীষণ কষ্ট পান, তারা চান ঘর যেন প্রতিধ্বনিত হয়, কিন্তু তা হয় না, এই অপেক্ষায় কখনো কখনো তাদের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায়। এমনই এক বৃদ্ধ দম্পতি ধৈর্য হারিয়ে নাতি-নাতনি না হওয়ায় ছেলে ও পুত্রবধূর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন এবং আদালত থেকে ৫ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ চেয়েছেন। পুরো ব্যাপারটা কী, জানুন।
প্রকৃতপক্ষে, হরিদ্বার জেলা ও দায়রা আদালতে, এক বয়স্ক দম্পতি তাদের ছেলে ও পুত্রবধূর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন এবং আদালতে আবেদন করেছেন যে তাদের ছেলের লালন-পালনের জন্য ব্যয় করা ৫ কোটি টাকা ফিরিয়ে দেওয়া হোক, অন্যথায় তাদের ছেলে আর পুত্রবধূ এক বছরের মধ্যে নাতি বা নাতনি দিক।
বিয়ের ৬ বছর পরও ছেলে ও পুত্রবধূর কোনো সন্তান হয় নি এবং তারা সন্তান নিতেও চায় না। কিন্তু তার মা-বাবা চান ছোট শিশুর শব্ধ যেন তাদের বাড়ির উঠানে অনুরণিত হয়। তারা বোঝানোর চেষ্টা করলেও তাদের ছেলে ও পুত্রবধূ তাদের কথা না শুনলে বৃদ্ধ বাবা-মা আদালতে পৌঁছান।
ক্ষুব্ধ বৃদ্ধ বাবা-মা তাদের উভয়ের বিরুদ্ধে হরিদ্বারের 3য় এসিজে এসডি-3 আদালতে মামলা করেছেন এবং তাদের ছেলের লালন-পালন এবং তার শিক্ষা, বিয়ে ইত্যাদিতে ব্যয় করা প্রায় ৫ কোটি টাকা ফেরত দাবি করেছেন। তিনি বলেন, ছেলেকে এতটা সক্ষম করে তোলার পরও যদি তাকে বৃদ্ধ বয়সে নিঃসঙ্গ জীবন যাপন করতে হয়, তাহলে তা তার জন্য নির্যাতনের মতো।
বয়স্ক সঞ্জীব রঞ্জন প্রসাদ BHEL-এ অফিসার হিসাবে কর্মরত ছিলেন এবং অবসর নেওয়ার পর তিনি এখানে তার স্ত্রী সাধনা প্রসাদের সাথে একটি হাউজিং সোসাইটিতে বসবাস করছেন। বৃদ্ধ দম্পতি তাদের একমাত্র ছেলে শ্রেয় সাগরকে শিক্ষিত করতে কোন প্রচেষ্টা বাকি রাখেননি। এমনকি তার সমস্ত পুঁজি খরচ করে তাকে পড়াশুনা করিয়েছেন।
তাকে পাইলট বানানোর জন্য বিদেশে প্রশিক্ষণের জন্যও লাখ লাখ টাকা খরচ করেছেন। জীবনের সব পুঞ্জিভূত পুঁজি ব্যয় করেছেন ছেলের স্বপ্ন পূরণে। শ্রে সাগর ২০১৬ সালে নয়ডার বাসিন্দা শুভাঙ্গী সিনহা কে বিয়ে করেছিলেন। শ্রে সাগর একজন পাইলট, এবং তার স্ত্রী শুভাঙ্গীও নয়ডায় কাজ করেন।
ছেলের বিয়ের পর বৃদ্ধ বাবা-মায়ের কাছে একটা আশার আলো ছিল যে তাদের ঘরে নাতি-নাতনি থাকবে এবং বাড়িটা মুখরিত হবে। কিন্তু অপেক্ষা করেও যখন সেটা হয়নি বৃদ্ধ দম্পতি এখন আদালত কে বলছে এটি বিচার করতে।