জং ধরে যাওয়া এক পুরনো ট্রাঙ্ক খুলতেই বেরিয়ে এল অনেকগুলো মেডেল আর একগুচ্ছ শংসাপত্র। সবই প্রায় জাতীয় স্তরে প্রাপ্ত। এর মধ্যে রয়েছে চারটি সোনার মেডেলও। এগুলি ঘিরে আক্ষেপ রিঙ্কু বর্মণের। জাতীয় স্তরে রেকর্ড গড়া রিঙ্কু বর্মন এখন পরিযায়ী শ্রমিক। পেটের দায়ে ৩৫০ টাকা রোজ এই টাকায় সুদূর গুজরাটের সুরাটে এম্ব্রয়ডারির কাজ করেন দিনাজপুরের স্বর্ণপদক প্রাপ্ত রিঙ্কু। কয়েক বছর হয়েও গেল রিঙ্কুকে খেলার জগৎ ছেড়ে সরে দাড়াতে হয়েছে।
সদ্যই শেষ হয়েছে টোকিও অলিম্পিকস। সেখানে পদক জেতা নীরাজ চোপড়া থেকে মিরাবাই চানু সকলেই আজ দেশের চোখের মনি। কিন্তু এই সব খেলোয়াড়ও উঠে এসেছে সেই জাতীয় স্তরে খেলেই। আর খেলাধুলা চালিয়ে যেতে তাঁদের পাশে দাড়িয়েছে রাজ্য সরকার।
দক্ষিণ দিনাজপুরের কুমারগঞ্জ ব্লকের অশোকগ্রাম পঞ্চায়েতের পূর্ব বিষ্ণুপুরের বাসিন্দা এই অ্যাথলিট রাজবংশী সম্প্রদায়ের।বছর ছাব্বিশের রিঙ্কু ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলোয় অত্যন্ত পারদর্শী ছিলেন। শিলিগুড়িতে স্পোর্টস অথরিটি অব ইন্ডিয়ার (Sports Authority of India) বা SAI এর শিবিরে সুযোগও পান। সেখানে থেকেই রেলওয়ের স্কুলে নিজের লেখাপড়া আর খেলাধুলা দুই একসাথে চালিয়ে যাচ্ছিলেন। হরিয়ানায় ২০০৯ সালে অনুষ্ঠিত হওয়া ন্যাশনাল ইন্টার জ়োনাল জুনিয়র অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপের অনূর্ধ্ব ১৬ বিভাগে ১০০০ মিটার রিলে রেসে দৌড়ে ২ মিনিট ১.৪৯ সেকেন্ডে শেষ করে রিঙ্কু বর্মন গড়েছিলেন নতুন মিট রেকর্ড। শুধু এই নয় জাতীয় স্তরে আরো অনেক সাফল্য তার ঝুলিতে। তার এই খেলাধুলা চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রথম বাঁধা আসে কয়েক বছর আগে বাবা গণেশ বর্মণ মারা গেলে। খেলাধুলা ফেলে উপার্জনের খোঁজে রিঙ্কুকে চলে আসতে হয় বাড়িতে, সংসারের দায়িত্ব সামলাতে। সহায়তার হাত বাড়াননি কেউই। সংসারের দরিদ্র আর অনটনের জেরে সেই রেকর্ড গড়া রিঙ্কুই আজ পরিযায়ী শ্রমিক হয়েছেন। পাশে পাননি কাউকে। রিঙ্কুর জানান, ‘‘ বেশ কয়েকটি জায়গায় চাকরির জন্য আবেদন করেছিলাম। চাকরি মেলেনি। আশেপাশের প্রতিবেশী লোকজন যখন তাকে বলে, খেলাধুলা করে তোর কোনও লাভ হল না রিঙ্কু, আক্ষেপে বুক ফেটে যায়। এত খেলাধুলা করেছি। যদি ছোটখাটো কিছু একটা চাকরি অন্তত জোটাতে পারতাম।’’
যখন রিঙ্কু আক্ষেপের স্বরে এই কথা গুলো বলছে তার সংগ্রামের সাক্ষ্য বহন করছে বসতবাড়ির ক্ষয়াটে মাটির দেওয়াল আর টিনের চাল ভেদ করে শেকড় ছড়ানো আগাছা।
কেন এমন অ্যাথলিটদের জন্য দিনাজপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থা কিছু করছে না? দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক অমিতাভ ঘোষ জানান, ‘‘ আমাদের সংস্থা দরিদ্র খেলোয়াড়দের পাশে দাঁড়ায়। তাঁদের খেলাধুলা যাতে না ছাড়তে হয় তার জন্য আমরা সাহায্যের হাত বাড়াই। এই বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছি।’’ প্রায় রকম কথা জানান জেলাশাসক আয়েশা রানি। তিনি বলেন, ‘‘আমরা রিঙ্কুর খোঁজখবর নিয়ে তাঁকে সহায়তার চেষ্টা করব।’’