জীবনের সব আশা যেখানে শেষ হয়ে যায় সেখানেই বোধহয় কাজে আসে বিধি। কথায় আছে ললাটের লিখন কেউ খন্ডাতে পারে না। কোথায়, কি ভাবে, কার ভাগ্যে , কোন উপায়ে বিধাতা পুরুষ কি লিখে গেছে তা যেন আঁচ করা দায়। ঠিক এমনটাই ঘটেছে নদিয়ার জ্যোতি সরকারের (মণ্ডল) ক্ষেত্রে। রাস্তায় রাস্তায় স্মৃতি হারা হয়ে ঘুরে বেড়ানোর বৃদ্ধাকে ৩৬ বছর পর নিতান্ত কাকতালীয় ভাবেই খুঁজে পেলেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা।
নিজের বাড়ির ঠিকানা ভুলে গত ৩৬ বছর এনার ঠাই হয়েছিল রাস্তায় রাস্তায়। সম্প্রতি অসুস্থ হয়ে পড়লে ডায়মন্ড হারবারের (Diamond Harbour) পাশে জাতীয় সড়কের এক পাশে পড়েছিলেন বৃদ্ধা। কাকদ্বীপের এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার জনা কয়েক সদস্য তাঁকে সেখানে অসুস্থ অবস্থায় দেখতে পান। সেখান থেকে উঠিয়ে এনে সপ্তাহখানেক আগে ডায়মন্ড হারবারের এক হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়। শুরু হয় প্রয়োজনীয় চিকিৎসা।
নাম ঠিকানা বিহীন এই বৃদ্ধার কথা জানতে পারেন হাসপাতালের অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার সুপ্রীম সাহা। তিনি সম্পর্ক করেন হ্যাম রেডিওর (Ham Radio) সঙ্গে। সঠিক ভাবে স্মৃতি না থাকা বৃদ্ধার সঙ্গে কথা বলে তাঁর নাম ও ঠিকানা জানার চেষ্টা করেন ওয়েস্টবেঙ্গল রেডিও ক্লাবের সম্পাদক অম্বরীশ নাগ বিশ্বাস ও তাঁর সঙ্গীরা। প্রথমে জিজ্ঞাসা করা হলে নিজের নাম, ঠিকানা সেই ভাবে বলতে পারছিলেন না জ্যোতিদেবী। পরে সত্তোরোর্দ্ধ বৃদ্ধাকে আবার করা হয় প্রশ্ন আলাপ আলোচনার মাধ্যমে। আস্তে আস্তে জানা যায় তাঁর আসল নাম। জানা যায়, নদীয়া জেলার চাকদার বল্লভপুরে বাড়ি জ্যোতি সরকারের (মণ্ডল)।
জ্যোতি সরকারের বলা ঠিকানা অনুযায়ী নদিয়ায় খবর পাঠানো হয়। যোগাযোগ করা মাত্রই ছুটে আসেন বৃদ্ধার ছেলে মিঠুন সরকার ও ভাই কুসুম মণ্ডল। তাঁরা এসে জ্যোতিদেবীকে চিনতে পারেন। জ্যোতি দেবীও চিনতে পারেন নিজের ছেলে ও ভাইকে। মাকে এত বছর বাদে খুজে পেয়ে আনন্দে জড়িয়ে ধরেন মিঠুন সরকার। বোনকে খুজেঁ পেয়ে ভীষণ খুশি কুসুম মণ্ডলও। তাঁরাই বলেছেন, যে দীর্ঘ ৩৬ বছর আগে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছলেন জ্যোতি সরকার (মণ্ডল)। সেই সময় পরিবার তার খোঁজ করছে। থানায় মিসিং ডাইরি করা হয়েছিল। কিন্তু খোঁজ মেলেনি। জ্যোতিদেবীকে খুঁজে পাওয়ার আশা তো ছেড়েই দিয়েছিলেন তাঁর পরিবার। এত বছর বাদে এই ভাবে মাকে আবার ফিরে পাবেন চিন্তাও করতে পারেননি মিঠুন সরকার। তিনি মা কে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
ফিরে পাবেন কল্পনাও করতে পারেননি মিঠুন সরকার। বৃহস্পতিবারই তিনি ও কুসুম মণ্ডল বৃদ্ধাকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।