শুধু যে বড় মাপের অ্যাথলেট তাই নয়, ভালো খেলোযাড় হয়ে উঠতে যে দরকার বড় মাপের মনের মীরাবাই চানুর থেকে তাঁর ভাল উদাহরণ হয়তোই কেউ হয় না। মীরাবাইয়ের জীবনে একজন সফল ভারোত্তোলক হয়ে ওঠার যে সংঘর্ষ তা প্রত্যেকের কাছেই এক শিক্ষা। তবে সেই সময়ে নিঃস্বার্থ ভাবে মিরাবাই এর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন যারা আজ খ্যাতির শীর্ষে পৌছেও মিরাবাই তাদের ভুলে যাননি। তাই শৈশবের স্মৃতি হাতড়ে আজ তাদের ফের খুজে বেড়াচ্ছেন মীরাবাই চানু। ব্যাপারটা কি? জেনে নিন।
মীরাবাই চানুকে তখনও কেউ সেই ভাবে চেনেন না। মণিপুরের নংপুক কাকচিং একটি গ্রামে তিনি বসবাস করতেন। সেখান থেকে বেশ কিছুটা দূরে ছিল মণিপুরের রাজধানী ইম্ফলের খুমান লাম্পাক স্পোর্টস কমপ্লেক্স। ভারোত্তোলনে রৌপ পদক জয়ী চানুকে তখন গ্রাম থেকে শহরে রোজ যেতে হত অনুশীলনের জন্য। তাঁর মা নংপুক কাকচিং গ্রামে এক ছোট্ট চায়ের দোকান সামলাতেন। মেয়ের যাতায়াতের খরচ, পাশাপাশি ভারোত্তোলক হয়ে ওঠার জন্য উপযুক্ত খাওয়া দাওয়ার খরচ সব সামলে ওঠা বেশ অসম্ভব ছিল। সেই সময় অভাবী পরিবারের মীরাবাই কে ইম্ফলের ট্রেনিং সেন্টারে পৌঁছে দিতেন তাঁর বাড়ির সামনে দিয়ে যাওয়া ট্রাক ড্রাইভাররা। প্রতিদিন সকালবেলা গ্রাম থেকে ট্রাক যেত বাজারে, আর সেই ট্রাকে চরেই মিরাবাই যেত অনুশীলনে। ফলে বেঁচে যেত তার যাতায়াত বাবদ খরচ। সেই বেচেঁ যাওয়া টাকাতেই চলত তার ভারোত্তোলন এর ডায়েট।
চানুর মা সাইখোম ওংবি টম্বি বলেন, “আমি একটা ছোট চায়ের দোকান চালাই। সেই দোকান থেকেই চানুকে রোজ নিয়ে যেতেন ওঁরা। যাতায়াত বাবদ খরচ বেঁচে যাওয়াতে সেই টাকায় চানুকে যতটা সম্ভব পুষ্টিকর খাবার দেওয়ার চেষ্টা করা হত। ”
আজ কোনো কিছুর আর অভাব নেই চানুর। অলিম্পিকে পদক জয়ের পর তিনি কোটিপতি। মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী চানু ঘরের ফেরার পরই তাঁকে রাজ্যভিত্তিক এক সংবর্ধনা সভায় মনিপুর রাজ্যের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসাবে নিয়োগের কথা জানান। পাশপাশি এক কোটি টাকার অর্থ পুরস্কারও দেওয়া হয় তাঁকে। আজ তার চারপাশে খ্যাতি আর জাক জমক। কিন্তু তার এই খ্যাতির পেছনে কম অবদান নেই সেই সব নাম না জানা ট্রাকচালকদের। অলিম্পিক্সে পদক জয়ের পর তাই এখন তাঁদের খোঁজে চানু।
মিরাবাই চানু বলেন, “আমার শুরুর দিকে কঠিন সময় পাশে ছিলেন ওই সমস্ত ট্রাকচালকরা। আমি আজ তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে চাই। তাঁদের সঙ্গে দেখা করে তাদের থেকে আর্শীবাদ নিতে চাই। আজ তাঁদের যদি কোনও রকম সাহায্যের প্রয়োজন থাকে আমি পাশে থাকতে রাজি।”