একবিংশ শতকে মহিলারা বিভিন্ন জায়গায় চালিকা শক্তি। মহিলারাই দশভূজা হয়ে সব সামলাচ্ছেন। কিছু রীতি তবু রয়ে যায় যুগ যুগ ধরে। সেই প্রথা আজও মেনে চলেছে তেঁতুলতলা বারোয়ারী জগদ্ধাত্রী পুজোয়।
যেমন ভদ্রেশ্বরের তেঁতুলতলার প্রাচীন জগদ্ধাত্রী পুজোর সেরা আকর্ষণ পুরুষদের সিঁদুরখেলা। প্রতিবছরই দশমীর দিন মায়ের বিসর্জনের আগে পুজো মণ্ডপে হয় অভিনব বরণ। পুরুষরাই শাড়ি পরে প্রতিমা বরণ করেন এখানে। যা দেখতে উদগ্রীব হয়ে থাকেন দর্শনার্থীরা। চিরকালীন প্রথা মেনে এবারেও চন্দননগরের তেঁতুলতলা সার্বজনীন জগদ্ধাত্রী পুজো কমিটির মা-কে বরণ করলেন পুরুষরা। যুগ যুগ ধরে এখানে পুরুষরাই শাড়ি পড়ে মা-কে বরণ করেন। সেই প্রথায় দেখা গেল না কোনওরকম পরিবর্তন। প্রতিমা বরণের সব রীতিই পালন করেন পুরুষরা। মিষ্টিমুখ, শঙ্খ-উলুধ্বনি দিয়ে প্রতিমা বরণ, সবই করেন পুরুষ সদস্যরা। পুজোর বয়স ২২৯ বছর।
প্রচলিত মতে রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের দেওয়ান দাতারাম সুরের মেয়ের বাড়ি গৌরহাটিতে একসময় হতো জগদ্ধাত্রী আরাধনা। তাঁদের আর্থিক অবস্থা খারাপ হয়ে যাওয়ায় সেই পুজোই চলে আসে ভদ্রেশ্বর তেঁতুলতলায়।
এই বিষয়ে পুজো কমিটির প্রধান উপদেষ্টা তথা ওয়ার্ড কো-অর্ডিনেটর শ্রীকান্ত মণ্ডল জানান, দেশ স্বাধীনের অনেক আগে এই পুজো যখন শুরু হয়েছিল তখন ফরাসিরা এবং পরবর্তী কালে ইংরেজরা এই পুজো দেখতে আসতেন।বাড়ির মেয়েরা তাঁদের সামনে বেরোবেন না বলে পুজোর যাবতীয় কাজ করতেন পুরুষরা। সেই থেকেই এই প্রথার জন্ম। সেই রীতিই আজও চলে আসছে।
স্থানীয় মতে, তেঁতুলতলার মা জগদ্ধাত্রী খুবই জাগ্রত। তেঁতুলতলার পুজোয় রীতিমতো জাঁকজমক হয়। পুজোয় পুরোহিতই থাকেন প্রায় ১৫ থেকে ২০ জন। ১৫০টির বেশি বেনারসি দিয়ে দেবীর বস্ত্র তৈরি হয়। দেবীর গায়ের রং এখানেও প্রভাতসূর্যের মতো।
করোনা বিধি মেনেই আয়োজন করা হয় পুজোর। ভক্তদের প্রার্থনা, আসছে বছর যেন করোনামুক্ত পৃথিবীতে মায়ের আরাধনা করতে পারেন তাঁরা।