পৃথিবীতে সফল মানুষ এবং অসফল মানুষ -এর মধ্যে খুব বড় একটা পার্থক্য থাকে আর এই পার্থক্য হল যারা জীবনে সফল হয় তারা কোনো কিছুতেই হতোদ্যম হয়ে পড়ে না। জীবন যতই তাদের চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলুক না কেন, তারা ঠিক সেই বাঁধা কে মনের জোরে অতিক্রম করে এগিয়ে যায়। আর সেই ভাবেই একদিন তারা নিজেদের পথে সফল হয়। আমরা অনেকেই আছি যারা খুব সহজে হাল ছেড়ে দেই। হতাশ হয়ে পড়ি। কিন্তু আজ এমন একজনের কথা এখানে আনবেন যে ম্যানেজমেন্টের পড়ায় অসফল হয়েও হার মানেনি।
২২ বছর বয়সী প্রফুল্ল এমবিএ করতে চেয়েছিল কিন্তু দুই বছরের চেষ্টার পরও সে এমবিএ’র এন্ট্রান্সে সে পাশ করতে পারেনি। এরপর সে বহুজাতিক সংস্থা ম্যাকডোনাল্ডসে কাজ করতে শুরু করে। কিন্তু সেখানকার সামান্য মাইনেতে ঠিক চলছিল না। ভবিষ্যৎও সেই ভাবে কিছু ছিল না। তাই সে ভাবে নিজের পায়ে দাঁড়াবে। এমন কথা ভাবতেই তার মনে ইচ্ছা জাগে ব্যবসা করার। তাই সে ব্যাবসা শুরু করার জন্য ৮ হাজার টাকা ধার নেয় তার বাবার থেকে। এরপর সে ফুটপাথের ধারে শুরু করে নিজস্ব চায়ের দোকান।
এই চায়ের দোকান আজ বড় চা জয়েন্ট হয়ে উঠেছে। “এমবিএ চায়ওয়ালা” নামে গোটা দেশে নাম করেছে। ফুটপাথ থেকে যাত্রা শুরু করে আজ প্রফুল্লর এই ব্যবসার টার্নওভার বছরে তিন কোটি টাকা। প্রফুল্ল বিলোরের ইচ্ছে ছিল নিজের একটা রেস্টুরেন্ট খোলার কিন্তু টাকা না থাকায় শুরুর দিকে তার সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। তাই সে ফুটপাথেই তখন তার চায়ের দোকান খোলার সিদ্ধান্ত নেয়। লোকে কি বলবে না ভেবে। প্রথমদিকে তার বাবা-মায়ের এই চায়ের দোকান খোলার বিষয়ে আপত্তি ছিল। তারা কিছুতেই রাজি ছিলেন না। কিন্তু এক সাক্ষাৎকারে প্রফুল্ল জানায় তার নিজের উপর পুরো বিশ্বাস ছিল যে সে তার চায়ের দোকানের ব্যবসাটাকে ঠিক একদিন দাঁড় করাতে পারবে।
প্রফুল্ল জানান প্রথম প্রথম রোজ গড়ে ১০০ টাকা করে ইনকাম হত, আস্তে আস্তে তা বেড়ে প্রতিদিন ৫০০ টাকায় পৌঁছায়। প্রফুল্ল আরো জানায় যখন সে চায়ের দোকান দিয়েছিল তখন অনেকেই এই নিয়ে তার মজা উড়িয়েছি। কিন্তু তার জন্য সে মন খারাপ করেনি। সে সেই মজা গুলোকেও জীবনে একটা শিক্ষা রূপে গ্রহণ করেছিল। প্রফুল্ল চা বানানোর ফাঁকে তার চায়ের দোকানের ভিডিও বানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করতে থাকে। তার পোষ্ট করা ভিডিওতে প্রচুর উৎসাহ দেওয়ার কমেন্টস কম আর নেগেটিভ কমেন্টস বেশী আসতো। কিন্তু আস্তে আস্তে সময় পাল্টায়। তার দেওয়া সেই ভিডিওগুলো ভাইরাল হতে থাকে আর বহু মানুষ তার চায়ের দোকানের সম্পর্কে জানতে পারে।
এরপর তার ব্যাবসা বাড়তে থাকে। শুরু হয় লাভ আসা। প্রফুল্ল আরো উদ্যোগী হয়ে ওঠে চায়ের ব্যাবসার ব্যাপারে। কিন্তু ব্যাবসা বাড়তেই কিছু মানুষ প্রফুল্লের দোকানে বেশ বাগড়া দিতে থাকে। তাই সে বাধ্য হয়ে সেই জায়গা থেকে সরিয়ে আর এক জায়গায় তার দোকান খোলে। সাথে সাথে ব্যাবসা বাড়িয়ে চা এর সাথে কফি আর স্ন্যাকস্ও বিক্রি করতে থাকে সে। ২০২৯ সালে প্রফুল্ল ৩০০ বর্গফুট জায়গাতে একটি রেস্টুরেন্ট খোলে। আজ তার রেস্টুরেন্টে বেশ কয়েকজন কর্মী কাজ করে। এমবিএ করার স্বপ্ন পূরণ অসফল হয়েও একজন সফল ব্যবসায়ী হয়ে উঠেছে প্রফুল্ল।