আপনি কি কখনও পিঁপড়ার জনসংখ্যা সম্পর্কে চিন্তা করেছেন? পৃথিবীতে কত পিঁপড়া বাস করে? এটার বিষয়ে যে খুব একটা কেউ ভাবেনি সেই কথা বলাই বাহুল্য। ক্ষুদ্র আকারের এই জীবটির সংখ্যা নির্ধারণ করাও বেশ জটিল। যদিও সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা পৃথিবীতে উপস্থিত পিঁপড়ার জনসংখ্যা খুঁজে বার করতে সক্ষম হয়েছে। আনুমানিক সংখ্যাও বের করা হয়েছে। সংখ্যাটিতে এত বেশি যে শূন্য যে গুনে যে কারো মাথা ঘুরবে। জানা গেছে যে মানুষ বা অন্য যে কোনও প্রাণীর চেয়ে হাজার বা লক্ষ গুণ বেশি পৃথিবীতে বসবাসকারি পিপড়ের সংখ্যা।
বিজ্ঞানীরা একটি গবেষণা করেছেন। কৃত গণনা অনুসারে, সমগ্র বিশ্বে ২০ কোয়াড্রিল্লিয়ন (20 Quadrillion) পিঁপড়া রয়েছে। প্রচলিত ভাষায় এর অর্থ ২০০ লক্ষ কোটি। আপনি যদি এই সংখ্যা এবং সংখ্যায় উপস্থিত মোট শূন্য দেখতে চান, তাহলে নিজেই গণনা করুন। পৃথিবীতে ২০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০ পিঁপড়া আছে। এই পিঁপড়াগুলি একসাথে ১২ মিলিয়ন টন শুকনো কার্বন তৈরি করে। এত কার্বন, পৃথিবীর সমস্ত পাখি এবং স্তন্যপায়ী প্রাণী একসাথে মিলেও তৈরি করে না। এই শুষ্ক কার্বনের ওজন পৃথিবীর মোট মানুষের ওজনের এক-পঞ্চমাংশ।
আমরা বলি যে মানুষ পৃথিবী চালায়। মানুষ প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করে। যদিও বহু বছর আগে, বিখ্যাত জীববিজ্ঞানী এডওয়ার্ড ও উইলসন কীটপতঙ্গ সম্পর্কে বলেছিলেন যে কেবলমাত্র ছোট প্রাণীরা সমগ্র বিশ্বকে পরিচালনা করে। এই পরিসংখ্যান দেখার পর মনে হচ্ছে তারা সঠিক। পিঁপড়া প্রকৃতির একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তারা মাটিতে বাতাসের স্তর বজায় রাখে। বীজ স্থানান্তর করে। জৈব পদার্থ ভেঙ্গে দেয়। জীবন্ত প্রাণীদের জন্য থাকার জায়গা তৈরি করে। এগুলি ছাড়াও, তারা খাদ্য শৃঙ্খলের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
পিঁপড়ার ১৫,৭০০ টিরও বেশি প্রজাতি রয়েছে
পৃথিবীতে পিঁপড়ার ১৫,৭০০ প্রজাতি এবং উপ-প্রজাতি রয়েছে। এরকম অনেক আছে যাদের প্রজাতির এখনো কোনো নাম দেওয়া হয়নি। তাদের সামাজিক কাঠামো, পারস্পরিক সমন্বয়, ছন্দবদ্ধভাবে কাজ করা এবং একে অপরের যত্ন নেওয়া অনেক কিছু শেখায়। তারা সারা বিশ্বে ইকোসিস্টেম তৈরি এবং ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে।
জঙ্গল, পাহাড়, শহর, গ্রাম বা মরুভূমি। আপনি সব জায়গায় পিঁপড়া পাবেন। তারা সারা পৃথিবীতে বাস করে।
বিশ্বের সর্বত্র পিঁপড়া বাস করে, এটি গণনা করা কঠিন ছিল
সমস্যা ছিল পিঁপড়া সহজে গণনা করা যেত না। কারণ তারা কোনো নির্দিষ্ট জায়গায় থাকে না। তারা বন, মরুভূমি, তৃণভূমি, গ্রাম এবং শহরে যে কোনও জায়গায় বাস করে। তাদের নমুনা সংগ্রহ করা একটি কঠিন কাজ ছিল। কিন্তু ৪৮৯টি গবেষণা করার পর করা বিশ্লেষণে পিঁপড়ার এই জনসংখ্যা বেরিয়ে এসেছে। যা পূর্ববর্তী গবেষণায় রিপোর্ট করা জনসংখ্যার তুলনায় ২০ গুণ বেশি।
বিশ্বের অর্ধ ডজন বিশ্ববিদ্যালয় এবং বৈজ্ঞানিক প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীরা এই গবেষণাটি করতে একত্রিত হয়েছিলেন। কারণ মানুষের জনসংখ্যাকে যদি নিরাপদ রাখতে হয়, তাহলে পিঁপড়ার সংখ্যা জানা জরুরি। কারণ পিঁপড়া গণনার মাধ্যমে পৃথিবীতে ঘটা বড় জলবায়ু পরিবর্তনগুলি খুঁজে বের করা সহজ। কারণ, সারা বিশ্বে মানুষের কর্মকাণ্ডের কারণে পোকামাকড়ের সংখ্যা কমছে। তার বাসস্থান শেষ হয়ে আসছে। এর কারণ হচ্ছে জমির সঠিক ব্যবহার না। এছাড়াও রাসায়নিক ব্যবহার, অনুপ্রবেশকারী প্রজাতি এবং জলবায়ু পরিবর্তন।