সকাল, দুপুর কি রাত। সব সময়ই খাবার জন্য মিলত ইনস্ট্যান্ট নুডুলস। দিনের পর দিন শুধু ইনস্ট্যান্ট নুডুলস বখেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন কর্নাটকের এই ব্যাক্তি। তাই স্ত্রীর কাছ থেকে বিচ্ছেদ চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন ওই ব্যক্তি।
বিয়ে পুরনো ধ্যান ধারনা পাল্টিয়েছে যুগের সাথে। আগে সাধারণত কোনো পুরুষ উপার্জনের জন্য বাইরে যেত। সাধারণত মহিলারা রান্নাবান্না করতো। কিন্তু আজকের ব্যস্ত জীবনে স্বামী-স্ত্রী দুজনেই কাজে যাচ্ছেন। একইভাবে, রান্না করা মহিলাদের জানা উচিত এমন কোনও অলিখিত নিয়ম নেই। এই কারণেই বেশিরভাগ ছেলে মেয়েরা রান্নায় পারদর্শী এমন কোনো ব্যাপার নয়। এইভাবে, তরুণ দম্পতিরা ক্রমশ প্রস্তুত খাবারের উপর নির্ভরশীল হয়ে উঠছে। কিন্তু দিন রাত ইনস্ট্যান্ট নুডুলস খেতে খেতে তিতিবিরক্ত হয়ে এই স্বামী স্ত্রীর থেকে ডিভোর্স চেয়েছেন।
বিচারক এমএল রঘুনাথ, তার জীবনে বিবাহবিচ্ছেদের যে সমস্ত কেসগুলির সন্মুখীন হয়েছেন সেই ব্যাপারে কথা বলতে গিয়ে বলেছেন যখন তিনি বেল্লারিতে জেলা জজ ছিলেন তখন এই মামলাটি প্রকাশ্যে আসে। মহীশূরের প্রধান জেলা ও দায়রা আদালতের বিচারক এম রঘুনাথ বলেছেন যে এক স্বামী তার স্ত্রীর সাথে বিচ্ছেদ করেছিলেন কারণ তিনি সকালের প্রাতঃরাশ হোক কি দুপুরের খাবার, এমনকি রাতের খাবারেও ইনস্ট্যান্ট প্যাকেটজাত নুডুলস খেতে দিচ্ছিলেন।
ওই ব্যাক্তি নিজের অভিযোগে বলেছেন যে, “আমার স্ত্রী ম্যাগি, নুডল ছাড়া অন্য কিছু রান্না করতে জানত না। সে প্রতিদিন সকালের খাবার, দুপুরের খাবার এবং রাতের খাবারের জন্য নুডুলস তৈরি করত।’ তিনি বলেন, সুপার মার্কেট বা স্টোরে গেলে তিনি প্রতি মাসের রেশনে চাল, ডাল কম নুডুলস এর প্যাকেটই বেশী কিনতেন। বিবাহ বিচ্ছেদের এই মামলার নাম ছিল ম্যাগি কেস। মহীশূরে লোক আদালত সূত্রে খবর যে অবশেষে একটি তর্কবিতর্কের পর পারস্পরিক সম্মতিতে দম্পতি বিবাহবিচ্ছেদ করে নেয়।
প্রধান জেলা ও দায়রা আদালতের বিচারক, বিচারপতি এমএল রঘুনাথ, এই বিষয়ে বলতে গিয়ে বলেন আজকাল দম্পতিদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যাওয়া সাধারন বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বেশিরভাগ সময় মানসিক সমস্যাগুলি বিবাহকে নষ্ট করে দেয়। তিনি বলেন ৮০০ থেকে ৯০০টি বৈবাহিক মামলার মধ্যে ২০ বা ৩০টি ক্ষেত্রেই আমরা সাফল্য পাই।
“সাম্প্রতিক সময়ে ডিভোর্স লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করার আগে দম্পতিকে অন্তত এক বছর একসঙ্গে থাকতে হবে বলে একটি আইন রয়েছে। অন্যথায়, হয়তো বা বহু দম্পতি বিয়ের মন্ডপ থেকেই সরাসরি বিবাহবিচ্ছেদের জন্য আদালতের দ্বারস্থ হতেন। আদালতে এমন বিচারাধীন মামলা রয়েছে যেখানে দম্পতি বিয়ের পরের দিনই বিবাহবিচ্ছেদের জন্য আবেদন করেছেন।” নিজের অভিজ্ঞতা বলতে গিয়ে জানান বিচারপতি এমএল রঘুনাথ।
তিনি আরো বলেন “অধিকাংশ বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন শহুরে এলাকায় বসবাসকারী লোকদের কাছ থেকে আসে। গ্রামীণ এলাকায় গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি হস্তক্ষেপ করে এবং সমস্যার সমাধান করে। গ্রামে নারীদের স্বাধীনতা কম। সমাজ সম্পর্কে তাদের ভয় এবং তাদের পরিবারের প্রতি আবেগ তাদের বৈবাহিক সম্পর্ক চালিয়ে যেতে বাধ্য করে। তবে শহরে নারীরা শিক্ষিত ও স্বাবলম্বী। তাই তারা বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করতে দ্বিধা করেন না,” তিনি বলেছিলেন।