সে কিন্তু চুরি করেনি। তবে তপ্ত কুড়ুল চেটে তা ‘প্রমাণ’ করতে হল। রীতিমত মধ্যযুগীয় ধ্যান ধারণার বশবর্তী হয়ে পাকিস্তানের এই বর্বরতার এই ঘটনায় শিহরিত গোটা বিশ্ব। তিন জনকে গ্রেফতার করেছে পাকিস্তানি পুলিশ। অত্যাচার যার উপর হয়েছে, সে একজন নাবালক রাখাল।
পাকিস্তানের সংবাদ সংস্থা ডন জানিয়েছে, পাকিস্তানের বর্ডার মিলিটারি পুলিশ ফাজলা খাচ নামক স্থানে ওই তিন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে। অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে বালকটির উপর অমানবিক অত্যাচার চালানোর কারণে। যদিও পুলিশকে পাল্টা অভিযুক্তরা জানিয়েছে, একটি চায়ের কেটলি চুরি করেও নাকি বালকটি স্বীকার করেনি। তাই নিজের হাতে বানানো নিয়মে ‘শাস্তি’ দিতেই ওই ব্যবস্থা নেয় তারা।
আক্রান্ত ওই নাবালকের তেহসিব নাম। গরম লোহার কুড়ুলে মারাত্মক ভাবে তার জিভ পুড়ে গিয়েছে। তেহসিবের বাবা জান মহম্মদ জানিয়েছেন, তেহসিল সদর দফতরের সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে তেহসিবকে। তিনি ওই তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে এফআইআরও করেছেন। জানা গিয়েছে, চায়ের পাত্র চুরির অভিযোগে ওই শিশুকে তোলা হয়েছিল কাঠগড়ায়। এরপর নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার জন্য গরম কুঠার ঢুকিয়ে দেওয়া হয় ওই শিশুটির মুখে। এর জেরে জিভ পুড়ে গিয়েছে বাচ্চাটির মারাত্মক ভাবে বলে অভিযোগ তুলেছেন শিশুটির বাবা। তাদের বিরুদ্ধে অমানবিক অত্যাচার চালানোর অভিযোগ আনা হয়েছে। সিরাজ, আব্দুল করিম এবং মহম্মদ খান এই তিন অভিযুক্তের নাম।
ডন সংবাদ মাধ্যম ঘটনাটির খবর প্রকাশ করে জানিয়েছে, এই তিনজনের প্রত্যেকেই পাকিস্তানের উপজাতি অধ্যুষিত বালুচিস্থানের বসবাস করেন। পাকিস্তানের বালুচিস্থানে এখনও কিছু কিছু মধ্যযুগীয় কট্টরপন্থী নিয়ম চালু আছে উপজাতিদের মধ্যে । যেখানে অপরাধীকে কে এই ধরনের কার্যত ‘অগ্নিপরীক্ষা’ দিতে হয় নির্দোষ প্রমাণ করতে। অনেক সময় অভিযুক্ত ব্যক্তিকে জলের মধ্যে মাথা ডুবিয়ে বেঁধে দেওয়া সময় পর্যন্ত থাকতে না পারলে দোষী বা কোনো অপরাধে অভিযুক্ত বলে চিহ্নিত করা হয়।
২০২০ সালের হিসেব অনুযায়ী, পাকিস্তানে আচমকাই অনেকটা বেড়ে গিয়েছে শিশুদের বিরুদ্ধে হওয়া অপরাধ। সাহিল নামের ওই দেশের এক সংগঠনের সমীক্ষা অনুযায়ী, প্রতিদিন ১০টির মধ্যে আটটি পাকিস্তানি শিশু কোনও না কোনও অপরাধের শিকার হয়ে থাকে পাকিস্তানে। জানা গিয়েছে, শিশু সুরক্ষা নিয়ে কাজ করে ওই সংগঠন সাহিল।