ভারতবর্ষে মেয়ের বিয়েতে উপহার দেওয়ার রীতি বেশ পুরনো। শাড়ী, গয়না, বাসনপত্র ইত্যাদি নানাবিধ জিনিস সাধারণত ভারতের নানা বিয়েবাড়ীতে মেয়েকে দেওয়া হয়। নানা প্রদেশে প্রচলিত রীতি রেওয়াজ অনুসারে কিছু কিছু পরিবর্তন হয় কিন্তু মোটামুটি সর্বত্রই এক রেওয়াজ। কিন্তু ভারতবর্ষের এক সল্প পরিচিত সমাজে বিয়েতে উপহার বা যৌতুক হিসেবে দেওয়া হয় বিষাক্ত সাপ। তাই বিয়েতে যারা আসেন তারা উপহার হিসাবে কোনো মূল্যবান সামগ্রী নয় ধরে আনে বিষাক্ত সাপ। মোট ২১ টি বিষাক্ত সাপ। শুনতে অবাক লাগলেও এমনটাই হয়ে আসছে। ভারতবর্ষেরই মধ্যপ্রদেশের এক অখ্যাত অঞ্চলে গৌড়ীয় সমাজে নাকি কন্যাদানের সময়ে আজও এই সাপ উপহারের রীতি প্রচলিত। সেই রাজ্যের শুভ কাজে সাপ উপহার দেওয়ার রেওয়াজ চলে আসছে কয়েক শতাব্দী ধরে। সর্পদেবতা যদি সন্তুষ্ট হয় তাহলেই নাকি মেয়ের বিবাহিত জীবন হবে সুখে পরিপূর্ন।
গৌড়ীয় সমাজের মেয়ের বিয়ে ঠিক হলেই মেয়ের পরিবারের ওপর বাড়তি দায়িত্ব এসে পড়ে। বিয়ের নানা যোগাড় যন্ত্র তো আছেই। তবে সব থেকে দরকারী কাজ হল। আর বিয়ের রীতি বলছে সেই সাপ সাধারন যে কোনো সাপ হলে আবার চলবে না। বিষহীন হেলে নয়, বিয়েতে প্রয়োজনীয় কেউটের মতো বিষধর সাপ। খুজেঁ খুজেঁ এমন সাপ ধরে আনতে হবে, যার ছোবলে মুহূর্তেই মৃত্যু হতে পারে। এই ভয়ঙ্কর রেওয়াজেই বছরের পর বছর পালন করে আসছে এখানকার মানুষ।
অবশ্য এই গৌরীয়দের জন্য সাপকে ধরাটা খুব একটা কঠিন কাজ নয়। এই মধ্যপ্রদেশে যারা গৌড়ীয় জাতি রূপে পরিচিত, তারাই আমাদের কাছে বেদে বলে পরিচিত। অর্থাত্ সাপ ধরার জন্য কি কি কৌশল অবলম্বন করতে হবে তা তাদের নখদর্পনে। বিয়ের কিছুদিন আগেই সাপধরা পর্ব সমাপ্ত হয়ে যায় গৌরীয়দের। মেয়েদের শ্বশুর বাড়িতে পাঠানোর পূর্বে তার সাথে উপহার স্বরূপ ওই বিষধর সাপ দিয়ে দেন তারা। বলাই বাহুল্য বেদে সমাজে সাপ ভীষণ পবিত্র এবং তাকে মারা গর্হিত অপরাধ। এক্ষেত্রে মেয়ের সঙ্গে তার শ্বশুরবাড়ীতে তার সাথে যে সাপ পাঠানো হবে তার মধ্যে কোনও একটি যদি কোনো ভাবে মৃত্যু হয় ,তবে তাকে অশুভ বলে ধরা হয়। অর্খাত্ বিয়ের পর শ্বশুড়বাড়ীর লোকেদেরও নিতে হবে সাপের দায়িত্ব।