এই গ্রামে পুরোহিত এক মন্দিরে পুজো করছিলেন। তিনটি চিতা বাঘ সেই মন্দিরের বারান্দাতেই বসে আয়েশ করছে। সাথে আরো চারটে লেজ দোলাতে দোলাতে ঘুরে বেড়াচ্ছে আসে পাশে । কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো এঁরা কেউই পোষা নয়, সবকটিই জংলী। পুজোর পর ওই পুরোহিতই আবার দুধ ও জল এনে পাত্রে ঢেলে দিচ্ছে বাঘেদের জন্য। সেই পাত্র থেকে দুধ ও জল শান্তভাবে পান করছে চিতা গুলো। খাওয়া দাওয়ার পর নিজের মতো এদিক সেদিক ঘুরেও নেড়াচ্ছে তারা। গল্পের মতো মনে হলেও বাস্তবে কিন্তু এই ঘটনা ঘটেছে । অবাস্তব লাগলেও এটা সত্যি । এটা একটা অদ্ভুত গ্রাম। এখানে বন্য প্রাণী থেকে শুরু করে পাহাড় নদী জঙ্গল সবই যেন মানুষের বন্ধু। গ্রামের কী নাম? সেই গ্রাম কোথায় ?
এই গ্রামের নাম বেরা। একটি খেয়ালি আধা শহর, আধা গ্রাম ভারতের রাজস্থানে অবস্থিত। এক রমরমা পর্যটন কেন্দ্র উদয়পুর ও যোধপুরের মাঝামাঝি। মনোমুগ্ধকর ল্যান্ডস্কেপপাথুরে আরাভালি পর্বতের কোলে। আর ভুট্টা ও সরিষার ক্ষেতে ভরা প্রান্তর সাথে আছে তালপাতার ছাউনিতে গড়া কুঁড়েঘর । চিতার জন্যই এই গ্রাম বিখ্যাত। তাই গ্রামের ডাক নাম ‘চিতার দেশ’। তবে, কেবল চিতা বাঘের কারণেই যে বেরা পরিচিত, এমনটা কিন্তু নয়। বরং এই গ্রামকে সত্যিকার অর্থেই অনন্য করে তুলেছে যে ঘটনা, তা হলো- এটিই সম্ভবত একমাত্র প্রাকৃতিক পরিবেশ পৃথিবীর বুকে, ভারতের সবচেয়ে আতঙ্কজনক শিকারি প্রাণীগুলোর একটির সঙ্গে এক শতাব্দীরও বেশিকাল ধরে প্রতিবেশীর মতো জীবন কাটাচ্ছে মানুষ যেখানে।
অন্তত ৯০টি চিতা বাঘের বাস এখানকার কাঁটাযুক্ত ছোট ছোট ঝোঁপে। ইরান থেকে আফগানিস্তান হয়ে রাজস্থানে পাড়ি জমানো রাখাল জনগোষ্ঠী প্রায় হাজার বছর আগে রাবারির সঙ্গে বেশ শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ওই বাঘগুলোর। আসলে ‘রাবারি’ শব্দের আভিধানিক অর্থ- ‘বহিরাগত’। এই শব্দের মাধ্যমে পশুপালন ও ভ্রমণের মধ্যেই জীবন কাটানো যাযাবরদেরও বোঝানো হয়। এই গোত্র হিমালয়ে ছুটে বেড়ায় হিন্দু দেবতা শিবের অনুগত হিসেবে (পরনে চিতাবাঘের চামড়া- এই রূপেই সবসময় তাকে ফুটিয়ে তোলা হয়), এর উৎসের খোঁজে। তারা শিব ও পার্বতীর সৃষ্টি তাদের বিশ্বাস।
ওই শিকারি প্রাণীগুলোর অবাধ বিচরণ এই স্থানের দেবি মন্দিরগুলোতে। এমন অনেক মন্দির বেরার ১০-১২টি গ্রামে ছড়িয়ে রয়েছে। ‘ চিতাবাঘের এমন বিচরণ গ্রামের মন্দিরে অনেক পর্যটককে বিস্মিত করে; তারা রীতিমতো চমকে যান সেই পরিবেশেই পুরোহিতকে দৈনন্দিন আরাধনা করতে দেখে,’ হাসি মুখে বলেন দেওরা। ‘তবু,প্রাত্যহিক জীবন বরাবরই এমন বেরার ।’ যেখানে বারবার বন্যপ্রাণীরা মানুষের হাতে আক্রান্ত হয় গোটা পৃথিবীতে বা রক্তের স্বাদ চায় মানুষ দেখলেই, হিংস্র পশুরা, সেখানে এক ব্যতিক্রম বেরা।