কালীপুজোর পরেই আসে ভাইফোঁটা বা ভ্রাতৃদ্বিতীয়ার অনুষ্ঠান। কার্তিক মাসের শুক্লা পক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে হিন্দু ধর্মাবলম্বী প্রায় প্রত্যেক বোন তাদের ভাইয়ের কপালে ফোঁটা দেন তাদের দীর্ঘায়ু কামনায়। পশ্চিমবঙ্গে এই উৎসবটি ভাইফোঁটা নামে পরিচিত। পশ্চিমবঙ্গের বাইরে বেশিরভাগ রাজ্যেই এইদিন টিকে ভাইদুজ নামে পালন করা হয়। পাঁচ-দিনব্যাপী দীপাবলি উৎসবের শেষ দিন পালিত হয় ভ্রাতৃদ্বিতীয়া উৎসব। নেপালে ও পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং জেলায় পাহাড়ী মানুষজনের মধ্যে এই উৎসবের নাম ভাইটিকা নামে। পাহাড়ে বিজয়াদশমীর পর এটি বেশ সবচেয়ে বড় উৎসব।
ভাতৃদ্বিতিয়ার দিন বোনেরা “ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা, যম দুয়ারে পড়ল কাঁটা…’ প্রতি বছর এই মন্ত্র উচ্চারণ করে ভাইয়ের মঙ্গল কামনায় ফোঁটা দেন বোনেরা। কিন্তু এই উৎসবের প্রচলন কিভাবে হল হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে। ভাই ফোঁটা ঘিরে আছে পৌরাণিক কিছু কাহিনী।
ভাইফোঁটা কে যমদ্বিতীয়া নামেও ডাকা হয়। কেননা ভাইফোঁটার সাথে আছে যম দেবের একটি পৌরাণিক কাহিনি জড়িত। পুরাণ অনুযায়ী ধর্ম ও মৃত্যুর দেবতা যম তাঁর বোন যমুনা বা যমির গৃহে একবার যান নিমন্ত্রণ পেয়ে। কার্তিক মাসের দ্বিতীয় তিথিতে শুভ ক্ষণে দাদার কপালে তিলক লাগিয়ে তাঁর আরতি করে ঘরে আমন্ত্রণ জানান যমুনা। যত্ন করে তাঁকে খাওয়ান। বোনের রন্ধন কুশলতায় এবং আতিথেয়তায় অত্যন্ত খুশি হয়ে যম তাঁকে আশীর্বাদ করেন, এই শুভ দিনে যাঁরা বোনের হাত থেকে ফোঁটা নেবে তাঁরা নরক যাত্রা থেকে মুক্তি পাবেন। এরপর যমুনা তাঁর ভাই যমের মঙ্গল কামনায় আরাধনা করে তাঁরই পুণ্যপ্রভাবে যমদেব অমরত্ব লাভ করেন।
অন্য মতে, নরকাসুর নামে এক দৈত্যকে বধ করার পর যখন কৃষ্ণ তাঁর বোন সুভদ্রার কাছে আসেন, তখন সুভদ্রা তাঁর কপালে ফোঁটা দিয়ে তাঁকে মিষ্টি খেতে দেন। সেই থেকে ভাইফোঁটা উৎসবের প্রচলন হয়। অপর একটি সূত্রে জানা যায় যে একদা প্রবল পরাক্রমশালী বলির হাতে বিষ্ণু পাতালে বন্দি হন। শেষ পর্যন্ত এগিয়ে এলেন স্বয়ং লক্ষ্মী। তিনি বলিকে ভাই হিসেবে স্বীকার করেন। সেই উপলক্ষে তাঁর কপালে তিলক এঁকে দেন। ভ্রাতৃত্বের বন্ধন তখন স্বীকার করে বলি লক্ষ্মীকে উপহার দিতে চাইলে লক্ষ্মী ভগবান বিষ্ণুকে চেয়ে নেন। সেই থেকেই ভাইফোঁটা উৎসবের সূচনা।