মহিলা গ্যাংয়ের চলন্ত গাড়ি থেকে লুটপাট। এই দৃষ্টান্তমূলক অপরাধের মাস্টারমাইন্ড ওই মহিলাদের বাড়ির এক কর্তা। তিনি একজন ভুয়ো পুলিশ। সেই ভুয়ো পুলিশ ওই বাড়ির মহিলাদের নিয়ে এই লুটেরা গ্যাং তৈরী করেছিল। একেবারে ফিল্মি কায়দায় পুলিশের পোশাক পরে স্ত্রী এবং ভাইয়ের স্ত্রী সহ তৈরী করা মহিলা লুটেরা গ্যাং বিমানবন্দর যাওয়ার পথে এক ব্যক্তির গাড়ির ভিতর থেকে ব্যাগ লুট করেছিল। যদিও পূর্ব কলকাতার প্রগতি ময়দান থানার পুলিশ শনাক্ত করে শেষ পর্যন্ত সিসিটিভি ফুটেজের সূত্র ধরেই ওই মহিলা গ্যাঙের পান্ডাকে।
বিশ্বনাথ দে নামে ওই ভুয়ো পুলিশকে গ্রেপ্তার করা হয় বিধাননগর দক্ষিণ এলাকার নবপল্লি থেকে। পুলিশের অভিযোগ, সে একটি রুটের অটো ইউনিয়নের নেতা কলকাতার। গ্রেপ্তার করা হয় তার পরিবারের দুই বউ মীরা দে ও লক্ষ্মী দে কেও। এর আগেও একাধিক অপরাধ ঘটিয়েছে বিশ্বনাথ নিজেকে পুলিশ পরিচয় দিয়ে। স্ত্রী বা পরিবারের কারও সাহায্য নিয়ে ছিল কি না সেই ক্ষেত্রে, তা জানার চেষ্টা চলছে।
পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনার সূত্রপাত বৃহস্পতিবার রাত সোয়া দশটা নাগাদ। বিমানবন্দরে যাওয়ার জন্য দক্ষিণ কলকাতার রবীন্দ্র সরোবর থানা এলাকার মতিলাল নেহরু রোডের এক বাসিন্দা বাড়ি থেকে বেরোন। তিনি নিজেই নিজের গাড়িতে করেই যাচ্ছিলেন। চালকের পাশে তিনি বসেন। ল্যাপটপের ওই ব্যাগ গাড়ির পিছনের সিটের পিছনদিকে রাখা ছিল। তাতে ল্যাপটপ ছাড়াও আরও বেশ কিছু মূল্যবান বস্তু ছিল। পরমা আইল্যান্ডের কাছে তাঁর গাড়িটি এলে দেখেন, হাত দেখিয়ে গাড়িটি দাঁড় করানোর চেষ্টা করছেন ইউনিফর্ম পরা এক পুলিশ আধিকারিক। গাড়ি চালককে অভিযোগকারী থামাতে বলেন।
‘পুলিশ আধিকারিক’ এগিয়ে এসে বলে, যেহেতু কড়া বিধিনিষেধ শুরু হয়ে গিয়েছে রাতে, তাই গাড়ি নেই রাস্তাঘাটে। নিমন্ত্রণ সেরে তার পরিবারের মহিলারা বাড়ি ফিরতে পারছে না। তাদের গাড়ি করে নামিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয় চিংড়িঘাটার কাছে। তিনি ওই অবস্থায় রাজি হয়ে যান। তিন মহিলা গাড়ির পিছনের সিটে বসে। তারা নেমে যায় চিংড়িঘাটার কাছে। অভিযোগকারী বিমানবন্দরে নামার সময় দেখতে পান যে, উধাও হয়ে গিয়েছে গাড়ি থেকে তাঁর ল্যাপটপ ও মূল্যবান ব্যাগটি। প্রয়োজনীয় নথি ওই ব্যাগেই ছিল। তিনি প্রগতি ময়দান থানায় সঙ্গে সঙ্গেই অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ এলাকার সিসিটিভির ফুটেজ রাতেই খতিয়ে দেখে। ফুটেজে পুলিশের পোশাক পরা ওই ব্যক্তির ছবি দেখা যায়। এলাকার বাসিন্দাদের ছবিটি দেখানো হয়।
সেখানেই কয়েকজন আধিকারিক জানান যে, পুলিশের পোশাক পড়ে সে বিভিন্ন সময় ওই অঞ্চলে টাকা তোলে। তার সন্ধান শুরু করে পুলিশ। একটি সূত্রে জানা যায় যে, আসলে স্থানীয় একটি অটো ইউনিয়নের নেতা অভিযুক্ত ওই ব্যক্তি। তার অটো রয়েছে নিজের। পুলিশ সেই সূত্র ধরে তদন্ত করে জানতে পারে যে, সল্টলেকের নবপল্লিতে তার বাড়ি। সল্টলেকের নবপল্লিতে শুক্রবার সকালেই হানা দিয়ে বাড়িটি শনাক্ত করে পুলিশ গ্রেপ্তার করে বিশ্বনাথ দেকে। পুলিশের ইউনিফর্ম তার ঘরের ভিতর থেকে উদ্ধার হয়।
সে জেরার মুখে স্বীকার করে যে, সে এই অপরাধ ঘটিয়েছে বাড়ির বউদের সাহায্য নিয়েই। তার স্ত্রী মীরা দে ও ভাই শিবুর স্ত্রী লক্ষ্মী দেকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। লুট হওয়া ব্যাগ তাদের বাড়ি থেকেই উদ্ধার হয়। জেরার মুখে বিশ্বনাথ স্বীকার করেছে যে, এমন কোনও গাড়ি থেকে লুঠপাটের ছক সে কষে যার পিছনের সিট ফাঁকা। তখনই তারা দাঁড় করায় রবীন্দ্র সরোবরের বাসিন্দা ওই ব্যক্তির গাড়িটি দেখতে পেয়ে। ওই গ্যাংয়ের আরও এক মহিলা ছিল গাড়িতে। পুলিশ তারও সন্ধান চলছে বলে জানিয়েছে।