দারুচিনির গন্ধ কিন্তু সর্বদাই কারো ইন্দ্রিয়কে আরো সজাগ করে তুলতে পারে। দারচিনির স্বাদটাও তো বেশ আলাদা ধরনের – মিষ্টি আবার কখনও কখনও মসলাদার। যেকোনো রান্না, ডিজার্ট ইত্যাদিতে ফ্লেভর বাড়ায় দারুচিনি।
এখানেই শেষ নয়। আমাদের রান্নায় স্বাদ গন্ধ বাড়ানো ছাড়াও দারুচিনি আমাদের আরও জীবনে নানান উপকারে কাজে লাগে। এই মশলাটি চার হাজার বছর পূর্বে চিন দেশে ওষুধ হিসেবে ব্যবহার হত। প্রাচীন মিশর সভ্যতায় ২০০০ সাল থেকে দারুচিনি মশলা এবং ঔষধ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে, যেখানে মিশরের মানুষ এটিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছে। এমনকি মধ্যযুগে কাশি উপশমে, বাতের ব্যথা এবং গলা ব্যথা ইত্যাদির নানা রোগের জন্য চিকিৎসকরা দারুচিনি ব্যবহার করতেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের নানা দেশে গোল মরিচের সাথে সাথে দারুচিনি ভীষণ জনপ্রিয় মশলা। দারুচিনি আসলে একটি গাছের ছালের টুকরো। এই দারুচিনি গুঁড়ো হিসাবে রান্নায় বা খাবারে ব্যাবহার করা যায়। বহু ক্ষেত্রে দারুচিনির তেলও ব্যবহার করা যায়।
দারুচিনির গুণাগুণ:
এক চামচ গুঁড়ো দারুচিনিতে মেলে প্রায় ১৯ ক্যালরি। এর মধ্যে ৪ গ্রাম ফাইবার থাকে আরো থাকে নানা খনিজ। এক জন পূর্ণবয়স্ক ব্যাক্তির সারা দিনের চাহিদার ৬৮% ম্যাঙ্গানিজ, ৮% ক্যালসিয়াম, ৪% আয়রন থাকে। এছাড়াও এই পরিমাণ দারুচিনি গুঁড়োতে ৩% ভিটামিন কে (Vitamine K) রয়েছে। এছাড়াও এই মশালাটি দেহের রক্তচাপ সঠিক মাত্রায় রাখতে সাহায্য করে, হজমশক্তি উন্নতি করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার বাড়ায়, হৃদযন্ত্র ভালো রেখে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমায়, ক্যান্সারের ঝুঁকিও কম করে, এমনকি স্নায়ুর অসুখের চিকিৎসাতেও দারুণ কাজ দেয়। এখন দেখে নেওয়া যাক দারুচিনির আরো কিছু উপকারিতা….
১) শর্করা বা ব্লাডসুগার মাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য দারুচিনি খুব উপকারী এবং আপনার শরীরে ডায়বেটিস রোগ প্রতিরোধ করে। সকালের চায়ের কাপে চায়ের সাথে অল্প দারুচিনি গুঁড়ো ছড়িয়ে দিতে পারলে তা ভীষণ কাজ দেয়। এটি আপনার শরীরের প্রয়োজনীয় এনজাইমগুলো উজ্জীবিত করতে সাহায্য করে তার জেরে মানব দেহের কোষে ইনসুলিনের প্রভাব বৃদ্ধি পায়। এর ফলে রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়।
২) দারুচিনিতে মধ্যে রয়েছে অ্যান্টি-ব্যাক্টেরিয়াল উপাদান। যা পেটের মধ্যে ব্যাক্টেরিয়া ঘটিত কারণে যে সব অসুখ হতে পারে তা থেকে সুরক্ষা দেয়। দারুচিনির চা, দারুচিনির তেল, দারুচিনির গুঁড়ো ইত্যাদির ব্যাবহার পেটের বিভিন্ন সমস্যা থেকে বাঁচাতে সাহায্য করে।
৩) যারা ওজন হ্রাস করতে চান তাদের খাদ্য তালিকায় দারুচিনি রাখা খুবেই দরকারী। কারণ দারুচিনি রক্ত চলাচল সঠিক করে এবং হজমে ক্রিয়ায় সাহায্য করে। তাই পরিপাকের হার বাড়িয়ে এই উপাদান ওজন কমাতে সাহায্য করে।
এছাড়া দারুচিনির ভেতরে আছে অ্যান্টি ফাঙ্গাল প্রপার্টি। শরীরে ছত্রাক জাতীয় সংক্রমণ এর বৃদ্ধি রোধ করতে , খাদ্য-বিষক্রিয়া থেকে শরীর অসুস্থ হলে তা দমন করতে, পেশীর ব্যথা উপশমে এবং বাত ও অস্টিওপোরোসিসের সমস্যা কমাতে দারচিনি ভীষণ উপকারী।