ত্রেতাযুগের এক অপরাধের জন্য যে চারজনকে অভিশাপ দিয়েছিলেন সীতা, সেই অভিশাপের ভার আজও বয়ে চলেছে সেই চারজন। বর্তমান যুগেও এঁরা সেই অভিশাপের জীবনই কাটাচ্ছে। ত্রেতাযুগে পিতৃআদেশ পালন করতে দশরথ পুত্র রামচন্দ্র যখন ১৪ বছরের জন্য বনবাসে গিয়েছিলেন, তখন সীতাদেবীও রামচন্দ্রের সঙ্গ নিয়েছিলেন। স্বামীর পাশে দাঁড়ানোর জন্য তিনি রাজসুখ হাসিমুখে ত্যাগ করেছিলেন। এই সীতাদেবীই একবার ক্রুদ্ধ হয়ে ৪ জনকে অভিশাপ দিয়েছিলেন আর সেই অভিশাপের ফল ভোগ করে আজও কষ্ট পাচ্ছেন সেই চারজন। সেই চারজন কে কে? কেনই বা সীতাদেবী তাদের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে অভিশাপ দিয়েছিলেন জানেন কী?দশরথের মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া মাত্র দশরথপুত্র রাম ও লক্ষণ পিতার আত্মার শান্তির জন্য পিন্ডদানের বন্দোবস্ত করতে বের হন। তাদের ফিরতে বিলম্ব হওয়ায় সীতাদেবী নিজেই যাবতীয় বিধি-বিধান মেনে স্বর্গীয় শ্বশুরের পিন্ডদান করেন।
হিন্দু পৌরাণিক কাহিনীতে বলা হয় যে, চালের অভাবে সীতাদেবী বালুকার পিণ্ড প্রস্তুত করেছিলেন এবং দশরথের প্রেতাত্মা সীতাদেবীর হাত থেকে সেই পিণ্ড গ্রহণ করেছিলেন।সীতা এই ঘটনার সময় পুরোহিত, গরু, কাক এবং ফল্গু নদীকে সাক্ষী হিসেবে মেনে ছিলেন। প্রসঙ্গত হিন্দু শাস্ত্র মতে মহিলাদের পিন্ডদান নিষিদ্ধ। তারা সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য সম্মতও হয়েছিলো। এরপর রাম লক্ষণ দুই ভাই ফিরে এলে সীতাদেবী তাদেরকে জানান যে তিনি পিন্ডদান প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন।
এরপর যখন রাম লক্ষণ ফিরে আসেন তখন সীতা তাদের জানান দশরথকে পিণ্ড প্রদান করেছেন তিনি। একথা শুনে রামচন্দ্র বিস্মিত হয়ে যান । রাম সীতার কথায় অবিশ্বাস করলে সীতা তখন তার চার সাক্ষীকে ডাকেন। তবে চার জনই মিথ্যে সাক্ষী দেয়।সীতাদেবী কেন অভিশাপ দিয়েছিলেন?
কিছুতেই সম্পূর্ণ বিষয়টা বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। তখন সীতাদেবী তার চার সাক্ষীকে ডেকে আনেন। কিন্তু চারজনেই রামচন্দ্রের কাছে মিথ্যা সাক্ষ্য দেন এতে রেগে গিয়ে সীতাদেবী চারজনকে অভিশাপ দিয়েছিলেন।
পুরোহিতকে দেওয়া সীতার অভিশাপ:
রামচন্দ্রের কাছে মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য সীতাদেবী পুরোহিতকে অভিশাপ দিয়েছিলেন যে, তোমাদের দারিদ্র কখনো ঘুচবেনা। পুজোর পরে তোমরা যা কিছু দক্ষিণা পাবে তা দিয়ে তোমাদের আশা কখনো পূরণ হবে না। সেই থেকে অভাব পুরোহিতের নিত্যসঙ্গী হলো।
ফল্গু নদীকে দেওয়া অভিশাপ:
সীতাদেবী ফল্গু নদীকে অভিশাপ দিয়েছিলেন যে এই নদী সারাবছর শুকনো থাকবে এমনকি বর্ষাকালেও এই নদীতে খরা হবে। সেই থেকে ফল্গু নদী অন্তঃসলিলা।
কাককে দেওয়া অভিশাপ:
কাককে অভিশাপ দেন সীতা। বলেন কখনোই তোমরা পেট পুরে খেতে পারবে না, যা কিছু খাবে তা মারামারি করেই খেতে হবে। আজও কাকেরা পেট ভরে খেতে পায়না।
গরুকে দেওয়া অভিশাপ:
গরুকে অভিশাপ দিয়ে বলেন, প্রতিটি বাড়িতে তোমার পূজা হলেও সেই বাড়ির সকল মানুষের এঁটো খাবার খেতে হবে। আজও তাই হয়ে আসছে।