মৃত্যুর অধিক চরম সত্য বিশ্ব ব্রহ্মান্ড জুড়ে আর কিছুই নেই। মৃত্যু এমনই এক দুই অক্ষরের শব্দ, যা আমাদের নিয়ে যায় অজানা কোন দুনিয়ায়, যার সম্পর্কে আমরা কেউই কিছুই জানি না। সুন্দর এই পৃথিবী, এই জীবন ছেড়ে কেউ যেতে চায় না। তাই যদি মৃত্যু কাছে চলে আসে তাহলে শেষবারের মতো মানুষের মধ্যে আরেকটু বাঁচার আকুতি জাগে। কিন্তু সকলেই একটা জিনিষ খেয়াল করেছেন যখন মৃত্যুর সন্নিকটে এসে যায়, সেই সময় কোনো ব্যক্তি নিজের আশে পাশে উপস্থিত মানুষদের অনেক কিছুই বলতে চায়। কিন্তু বহু চেষ্টা সত্ত্বেও তাঁরা কিছুই বলে উঠতে পারে না। বেরিয়ে আসে একটা গোঙানির মতন আওয়াজ। মুখ বন্ধ হয়ে যায়, মুখে থাকে না কোনো ভাষা। কিন্তু কেন এমন হয়! এর কারণ আজও খুজেঁ চলেছে বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু হিন্দু ধর্মগ্রন্থ গরুড় পুরাণে এই বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়া আছে। হিন্দু ধর্মের পুরাণের মধ্যে গরুড় পুরাণকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়। এই গরুড় পুরাণে জীবন এবং সাথে সাথে মৃত্যুর বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। শুধু তাই নয় মৃত্যুর পরের অনন্ত পথের সফর সম্পর্কেও বলা হয়েছে। গরুড় পুরাণে মৃত্যুর পরের যাত্রা শুরুর ব্যাখ্যার আগেই বলা হয়েছে যে মৃত্যুর আগে অন্তিম সময় মানুষ কেন কথা বলার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।
মৃত্যুর আগে কেন বন্ধ হয়ে যায় মুখের কথা:
গরুড় পুরাণ অনুযায়ী মৃত্যুর সময় আসন্ন মৃত্যু পথযাত্রী ব্যাক্তির নিকট এসে দাঁড়ায় যমরাজ বা ধর্মরাজের পাঠানো দুই দূত। ওই যমের দুই দূত ব্যক্তির সামনে এসে দাঁড়ান মাত্র তাঁদের দেখে ব্যক্তি ভয়ভীত হয়ে পড়ে। সে উপলব্ধি পারে যে, সে আর বাঁচবে না। ব্যক্তির সমস্ত ইন্দ্রিয়গুলি শিথিল হতে শুরু করে দিলেও কিন্তু তার একটি ইন্দ্রিয় সজাগ থাকে। তার স্মৃতিশক্তি তাঁকে তার জীবনের ফেলে আসা বহু বছরের কথাও সেই সময় মনে করিয়ে দেয়। এ সময় সে আশেপাশের মানুষকে অনেক কিছু বলতে চায়, কিন্তু মুখ থেকে কথা বার করতে পারে না, কারণ যমদূত সেই ব্যক্তির প্রাণ তার দেহ থেকে বের করতে থাকে। এমন অন্তিম পরিস্থিতিতে তাই মুখ থেকে বার হয়ে আসে একটি গোঙানির শব্দ এবং ব্যক্তি বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ে। গরুড় পুরাণ অনুযায়ী যে সময় যমদূত ব্যক্তির শরীর থেকে প্রাণ বের করতে থাকে, তখন তাঁর জীবনের সব ভালো-মন্দ কাজ একবারে যেন কোনো সিনেমার রিলের মতো সামনে দেখতে থাকেন। তিনি সারা জীবনে যা যা কাজ করেছেন তা সব কিছুই তার চোখের সামনে ভেসে ওঠে। এটাই ব্যাক্তির জীবনের কর্ম। এর ভিত্তিতেই যমরাজ ব্যক্তির আত্মার সাথে ন্যায় করেন। যদি ওই ব্যক্তি জীবনে ভালো কাজকর্ম করে থাকেন, অন্যের ক্ষতি না করেন তবে তাঁর প্রাণ সহজে বেরিয়ে যায়, নয়ত ব্যক্তির আত্মা তাঁর শরীর ছাড়তে বেশ মুশকিলে পরে। কষ্ট দায়ক হয় তার মৃত্যু। তাই জীবনে ভালো কর্ম করার ওপর সবসময়ই জোর দেওয়া হয়, যাতে মৃত্যুর সময় তাঁরা সেই ভালো কর্ম সঙ্গে করে নিয়ে যন্ত্রণাবিহীন মৃত্যুর সাথে পরপারে যেতে পারে।
গরুড় পুরাণ মৃত্যুর পরের সফর নিয়েও আমাদের জানায়। এই পুরাণ অনুযায়ী আত্মা ১৩দিন পর্যন্ত নিজের গৃহের আশেপাশেই থাকেন এবং অনেক সময় আত্মা তার পরিবার আর প্রিয়জনদের ভালোবাসার মোহে এতটাই বাঁধা হয়ে পড়ে তাঁর যে সে পুরনো দেহ খুজেঁ বেড়ায় প্রবেশ করার জন্য। কিন্তু যমদূতের বন্ধন তাঁকে এমন করতে দেয় না। মৃত্যুর ১১ দিন পর সন্তানের হাতে পাওয়া জল, পিণ্ড পেলে মৃত ব্যক্তির আত্মাকে সব বন্ধন থেকে মুক্তি পাওয়ার শক্তি দেয়।