আমাদের চারপাশে কখনো কখনো কত অপরাধ ঘটে যায়। কিন্তু আমরা অনেকেই দেখেও না দেখার ভান করায় অপরাধী রেহাই পেয়ে যায়। কিন্তু এই রিকশাচালকের উপস্থিত বুদ্ধি আর সাহস দুটি বাচ্চা মেয়ের প্রাণ বাঁচিয়ে দিল। “আঙ্কেল , আমাদের খাবার খাওয়ানোর পর বাড়ি অবধি ছেড়ে দেবেন…” ই-রিকশায় বসে যখন দুই বাচ্চা মেয়ে তাদের সঙ্গে থাকা লোকটিকে যখন এই কথা বলল, রিকশাচালক ব্রহ্মদত্তের কান যেন সতর্ক হয়ে উঠল। কিছু একটা ঠিক নেই সন্দেহ হল তার। প্রথমেই ব্রহ্মদত্ত বাচ্চা মেয়েদুটি কে জিজ্ঞাসা করলেন যে তারা এই লোকটিকে চেনেন কিনা। উত্তরে মেয়েরা না বলায় আর দেরি করেনি রিকশাচালক। দ্রুত কাছে থাকা ট্রাফিক পুলিশ কর্মীদের খবর দেন। এভাবে অপহরণের হাত থেকে রক্ষা পেল দুই মেয়ে।
ঘটনাটি ঘটেছে দিল্লির বিবেক বিহারে অবস্থিত বালাজি মন্দিরের কাছে। সেখানে এক ব্যক্তি ৭ ও ৪ বছর বয়সী দুই মেয়েকে নিয়ে ই-রিকশায় উঠেছিলেন। প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে চিন্তামণি চকে নামাতে বলে রিকশা চালককে। এ সময় ই-রিকশা চালকের এই ব্যাক্তির কর্মকাণ্ড কিছুটা সন্দেহজনক মনে হয়। তাই চালক ওই ব্যক্তিকে মেয়ে দুটির বিষয়ে প্রশ্ন করেন। তিনি কোনো সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেন না। ই-রিকশাচালক চিন্তামণি চকে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাফিক কর্মীদের কাছে ই-রিকশা থামিয়ে দেন। তাদের সব বিস্তারিত জানান। ট্রাফিক কর্মীরা ওই ব্যক্তিকে কড়া জিজ্ঞাসাবাদ করলে অভিযুক্ত জানায় যে সে বাচ্চা মেয়ে দুটিকে অপহরণ করছিল। তিনি তাদের দিয়ে নিজের জন্য ভিক্ষার কাজ করাতে চেয়েছিলেন।
ডিসিপি (শাহদারা) আর. সত্যসুন্দরাম জানিয়েছেন, অভিযুক্তের নাম সঞ্জয়। বয়স ৪০। বিহারের ছাপরা জেলার বাসিন্দা। তিনি এখানে ফুটপাতে থাকেন। ঘটনাটি ৪ মার্চ সকাল সাড়ে ১০টার। ২০ বছর বয়সী যুবক ব্রহ্ম দত্ত, যিনি পেশায় একজন ই-রিকশা চালক এই বিষয়ে পুলিশকে জানিয়েছেন যে অভিযুক্ত দুই মেয়েকে বিবেক বিহারের বালাজি মন্দিরের বাইরে থেকে তার ই-রিকশায় নিয়ে উঠে বসেন। চিন্তামণি চকে যেতে বললেন। সন্দেহ হওয়ায় অভিযুক্তকে মেয়েদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে এদিক ওদিকের কথা বলতে থাকে। তাই ট্রাফিক কর্মচারীদের দেখে তাদের সামনে ই-রিকশা থামিয়ে দেন।
জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্ত সঞ্জয় জানায়, সে বাচ্চা মেয়ে দিয়ে ভিক্ষা করানোর উদ্দেশ্যে মেয়েদের অপহরণ করেছিল। পুলিশ দুই মেয়েকে তাদের বাবা-মায়ের কাছে হস্তান্তর করেছে, যারা একটি নির্মাণাধীন ভবনে শ্রমিক হিসাবে কাজ করছে। এ ঘটনায় অপহরণের মামলা রুজু করে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ডিসিপি বলেন, সাহস ও মন দিয়ে কাজ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন ই-রিকশা চালক। অপরাধ দমনে জনগণ এভাবেই চোখ-কান হয়ে পুলিশকে সহায়তা করতে পারে। ই-রিকশা চালক ব্রহ্ম দত্তকে পুলিশ উপযুক্ত পুরস্কার দেবে।