তাকে দেখলে অবাক হতে হয়। পরনে ময়লা কাপড়, ভিক্ষাবৃত্তি করেই চলছে যার দিন। কিন্তু তার সাথে কথা বললেই অবাক হবেন। ভাববেন এত শিক্ষিত একটি মানুষ কেন এমন অবস্থায় পড়ে রয়েছে। করুন এই চিত্রটি উঠে এসেছে উত্তরপ্রদেশের বারানসী ঘাট থেকে। এমনই একটি বাস্তবিক ঘটনা উঠে এল। সম্প্রতি, উত্তরপ্রদেশের প্রাচীন ধর্মস্থান হিসেবে খ্যাত বারাণসীর ঘাটে কয়েকদিন আগেই এমন এক মহিলার খোঁজ মিলেছে, যিনি উচ্চ শিক্ষিত হলেও ভিক্ষা করেই নিজের দিন গুজরান করছেন।
এই মহিলা ভিক্ষুক নাকি একেবারে নখ দর্পণে রয়েছে ইংরেজি বলার পারদর্শীতা। বহু শিক্ষিত মানুষই তার মতন করে সাবলীলভাবে ইংরেজিতে কথা বলতে পারবেন না। শিক্ষার বিচারে লজ্জায় পড়ে যাবেন অনেকেই। জরাজীর্ণ পোশাক পরা এই মহিলাকে গঙ্গার ঘাটে বসে ইংরেজিতে বাক্যালাপ করতে দেখেই আগ্রহী হয়ে পড়েন বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটির ছাত্র। ছাত্রদের কৌতুহল বশতই ওই ভিখারিনী ওই মহিলার সঙ্গে কথা বলা শুরু করলে তার আসল পরিচয় বিষয়ে জানতে পারে। জানা গিয়েছে ওই মহিলার নাম স্বাতী। তিনি জীবনে অসহায় অবস্থার সম্মুখিন হয়ে বেনারস ঘাটে চলে আসেন তিন বছর আগে। আর তারপর থেকে দিন গুজরান করতে ভিক্ষাবৃত্তিই তার ভরসা।
স্বাতী জানিয়েছেন তার বাড়ি দক্ষিণ ভারতে। তিনি ইংরেজি ভাষায় দক্ষ, ইংরেজিতে টাইপিং এ পারদর্শী এছাড়া কম্পিউটার সফটওয়্যার সম্পর্কেও পড়াশুনা করেছেন। স্কুলের পড়াশুনা শেষ করে কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে কলেজে ভর্তি হয়ে স্নাতক ডিগ্রীও লাভ করেছিলেন স্বাতী।
কিন্তু শিক্ষিত এক মহিলার ভিক্ষাবৃত্তি কেন বেছে নিতে হলো?
জানা গেছে পড়াশুনা শেষে স্বাতী বিয়ে করেন আর তারপরেই জীবনে নেমে আসে এক মারত্মক পরিণতি। বিয়ের পর যখন তিনি তার সন্তানের জন্ম দিতে যায়, সেই সময় তার শরীরের ডান অংশ প্যারালাইজড হয়ে যায়। এরপরই তিনি পরিবারের সকলের কাছে বোঝা হয়ে ওঠেন। দিনরাত লোকের গঞ্জনা সহ্য করতে না পেরে অবশেষে একদিন বাধ্য হয়েই বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে আসেন তিনি। ভবঘুরের মতন ঘুরতে ঘুরতে ভাগ্যের লেখায় চলে আসেন এই বেনারস ঘটে। সেই থেকে গঙ্গার ধারেই আশ্রয়ে তার জীবন কাটছে। বেনারসে আগত বহু মানুষ তাকে করুণা করে খাবার-দাবার দিয়ে যান, অনেকে আবার দান করেন কাপড়ও। স্বাতী জানিয়েছেন, তিনি মন থেকে চান না এভাবে ভিক্ষা করে জীবন কাটাতে। বরং নিজের যোগ্যতায় চান কোন একটা চাকরি। কিন্তু এই পারালাইজ এই শারীরিক পরিস্থিতি নিয়ে চাকরি শুরু করাও কঠিন কাজ। আর সেই কারণেই বাধ্য হয়ে ভাগ্যের পরিহাসে আজ সে ভিখারী।