ভারতীয় পুরাণের বর্ণনা অনুযায়ী কিন্নর হলেন তারা যারা না সম্পূর্ন পুরুষ না পুরোপুরি নারী। কিন্নরদের লিঙ্গের সুপষ্ট কোন আকৃতি নেই। বর্তমানে আমরা এদেরকেই হিজড়া বলে ডাকি। এরা আমাদের সমাজে আজও ব্রাত্য বলে গণ্য হয়। সুপ্রিমকোর্টে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের সমাজের বাকি সব অধিকারের স্বীকৃতি দিলেও এদেরকে সমাজ এখনও স্বীকার করে না।
কিন্তু অদ্ভুত তথ্য হল, হিন্দু ধর্ম আর ভারতের ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় মহাকাব্যে এবং পুরাণে মধ্যে তৃতীয় লিঙ্গের অন্তর্গত দেবদেবীর এবং নানান পৌরাণিক চরিত্রের কথা বার বার উঠে এসেছে। শিখণ্ডী থেকে শুরু করে কিন্নর ও বৃহন্নলার উদাহরণ মহাকাব্যে বার বার উঠে এলেও সমাজ সেই উদাহরণ বাস্তবে মানেনি। তাই আজও সংস্কারের বশে হিজড়াদের সমাজ থেকে দূরে রেখেছে।
কিন্তু কোথা থেকে সৃষ্টি হল কিন্নরদের। ভারতের পুরাণ অনুযায়ী ধীমান পুলস্ত্য’র সন্তান কিন্নররা হিমালয় পর্বতের গহনে কোন এক স্থানে, দেবতা, অসুর, রাক্ষস, পিশাচ, গন্ধর্বদের সাথে একই সাথে বাস করত। চন্দ্রবংশের প্রতিষ্ঠা করেছেন যিনি সেই দেবতা ইলের সৈনিক ছিলেন সকল কিন্নরগন । দেবতা ইল একবার পার্বতীর নিষিদ্ধ কুঞ্জবনে প্রবেশ করলে পার্বতী তাকে অভিশাপ দেয়। সেই অভিশাপে ফলে তার লিঙ্গ পরিবর্তন হয়। পুরুষ দেবতা ইল থেকে সে পরিনত হয় নারী ইলাদেবীতে। এরপর দেবতা বুধ’র সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন ইলাদেবী। ফলে বুধ কিন্নরদের চন্দ্র বংশের সৈনিকের কাজ থেকে মুক্তি দিয়ে তাদের গায়কে রূপান্তর করেন। পুরাণমতে এই কিন্নররা দেবলোকের দেব দেবীদের সুকন্ঠী গায়ক এর প্রজাতি। অসাধারণ কন্ঠে গান গেয়ে সকলকে মোহিত করার ক্ষমতা ছিল তাঁদের।
তাই আজও কারো বাড়িতে শুভ অনুষ্ঠানে, বা সন্তান জন্মালে কিন্নর সম্প্রদায়ের গান বাজনা করাকে শুভ মনে করা হয়।