ট্রেনের পরিবর্তে অনেকেই বাসে চেপে বেশ দূরের পথ পাড়ি দেন। ভিন রাজ্যে পারি দেন। এমনকি ভারত থেকে পাকিস্তান যেত বাস বা বাংলাদেশও পৌঁছে যাওয়া যায় বাসে চেপে। কিন্তু যদি শোনেন কলকাতা থেকে বাসে চেপে আপনি পারি দিতে পারেন সুদূর লন্ডনে!! অবাক লাগবে। এতদূর বাসে কিভাবে , কোন পথে! তবে এই পথেই একসময় চলেছিল বাস। শুধু তাই নয়, লন্ডন থেকে কলকাতা এসে সেই বাস পুনরায় ফেরত যেত লন্ডনে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া কিছু ছবি সামনে তুলে এনেছে সেই বাস সার্ভিসের ইতিহাস।
লন্ডন-কলকাতা বাস সার্ভিসের যাত্রা সূচনা করেছিলেন অসওয়াল্ড জোসেফ গ্যারি ফিশার। বাসটির নাম ছিল ‘দ্য ইন্ডিয়াম্যান’। অ্যালবার্ট ট্রাভেল নামক সংস্থার এই বাস ১৯৫৭ সালের ১৫ এপ্রিল লন্ডনের ভিক্টোরিয়া কোচ স্টেশন থেকে তার যাত্রা শুরু করে ৫ই জুন বাসটি কলকাতা শহরে পৌঁছায়। তার দীর্ঘ যাত্রাপথে বাসটি লন্ডন থেকে কলকাতা পৌঁছতে পেরোতো ফ্রান্স, ইতালি, যুগোস্লাভিয়া, বুলগেরিয়া, তুরস্ক, ইরান ও পাকিস্তান। তারপর প্রবেশ করত ভারতে। ভারতে আসার পর বাসের প্রথম স্টপ ছিল দিল্লি। এরপর আগ্রা। তারপরে ইলাহাবাদ এবং বেনারস। অবশেষে কলকাতায় এসে তার যাত্রা শেষ করত বাসটি।
দ্য ইন্ডিয়ামেন নামের এই বাস যাত্রা শুরু করেছিল ২০ জন যাত্রী নিয়ে। ২০ জনের মধ্যে সাত জন যাত্রী আবার লন্ডন থেকে কলকাতা এসে আবারও লন্ডন যাওয়ার রাউন্ড ট্রিপ কমপ্লিট করেছিল। এই সাত জনের মধ্যে ছিলেন পাঁচ জন পুরুষ এবং দু’জন মহিলা।
সেই সময় এই বাস যাত্রার ভাড়া ছিল ৮৫ পাউন্ড। ভারতীয় টাকায় হিসাব করলে যা দাড়ায় ৭ হাজার ৮৮৯ টাকা (বর্তমান হিসাবে)। বলাই যায় সেই সময়ের হিসেবে এটি যথেষ্ট ব্যয় বহুল ছিল। ‘দ্য ইন্ডিয়াম্যান’ বাসটি দোতলা বাস ছিল। জানা গেছে এই বাসটি সারাদিন চলতো আর রাতে যাত্রীরা আশ্রয় নিত কোন হোটেলে। যদি হোটেল না থাকতো তাহলে ক্যাম্প খাটিয়ে রাত্রি বাস করে আবারো রওনা দিতো। এই দীর্ঘ যাত্রাপথে যাতে ধকল কম হয় সেই কারণে বাসের ভেতরে ছিল গদি ওয়ালা সিট থেকে বই পড়া এমনকি ঘুমিয়ে নেবারও ব্যবস্থা।
নানা জটিলতার ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছিল এই বাস সার্ভিস কে। বেশ কয়েকবছর টানা চলার পরে বাসটির পেছনের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এর চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়। পরে এক ব্রিটিশ পর্যটক অ্যান্ডি স্টুয়ার্ট বাসটি কিনে নেন। কিন্তু পরবর্তীতে সীমান্ত সংক্রান্ত জটিলতার জন্য এবং রাজনৈতিক অস্থিরতায় বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।