দুর্গা পুজো শেষে দশমীর দিন মানেই সর্বত্র যেন বিদায়ের সুর, বিষাদের ছায়া। মর্ত্যের সফর শেষে মা দুর্গার পালা সেদিন ফের কৈলাসের পথে রওনা দেওয়ার। কিন্তু জানেন কি দশমীতে মায়ের বিসর্জন শেষেই করা হয় আরেক দুর্গাপূজা। দশমী তিথির পরেই শুরু হওয়া এই পুজোর খবর হয়ত বেশিরভাগ কেউ রাখেন না। বিসর্জনের পর শুরু হয় দেবীপুজো যা অপরাজিতা পুজো যা
কিন্তু কে এই দেবী অপরাজিতা?
শুধু মা দুর্গা রূপেই নয় অপরাজিতা রূপেও পুজো করা হয় দেবী দুর্গাকে। আশ্বিন মাসে দুর্গার বিসর্জনের পরই হয় অপরাজিতা দেবীর বোধন। দশমীর পর পুজিত হন দেবী অপরাজিতা। দুর্গা দশমীতে অপরিহার্য সাদা আর নীল রঙের অপরাজিতা। এদিন নীল অপরাজিতায় ফুলের মালা পরানো হয় দূর্গা মাকে। মূলত যেগুলি গৃহস্থ বাড়ির পুজো তাতেই এই অপরাজিতার পুজোর চলন রয়েছে। ‘অপরাজিতা’ দেবী আসলে মা দুর্গারই আরেক রূপ।
মুলত সাদা অপরাজিতা গাছকেই মা রূপে কল্পনা করে পুজো করা হত। এই পুজোর রীতি অনুযায়ী পুজোর দিনেই নতুন অপরাজিত গাছের চারা রোপণ করা হত। আগেকার দিনে অপরাজিতা পুজোর মূল উদ্দেশ্য ছিল মঙ্গল কামনা আর যুদ্ধে যাতে বিজয় লাভ হয় সেই উদ্দেশ্য। দশমীতে বিসর্জনের সময় থেকেই শুরু হয় অপরাজিতা পুজো। অনেকে অপরাজিতা গাছ নয় ঘট স্থাপন করেও সারতেন পুজো। বর্তমানে এই পুজোর চল অনেকাংশে কমে এলেও, বহু বনেদি বাড়ীর দূর্গা পূজায় এখনও রয়েছে এই অপরিজিতা পুজোর প্রচলন।
এই পুজোর রীতি অনুযায়ী পুজোর শেষে বেঁধে দেওয়া হয় হাতে অপরাজিতা গাছের ডাল। দেবীর উদ্দেশ্যে প্রার্থনা জানানো হয়েছে, ‘অপরাজিতা, তুমি সবসময় আমার বিজয়ী কর। আমার মঙ্গল ও বিজয় পাওয়ার জন্য আমি তোমাকে দক্ষিণ হাতে ধারণ করছি। দেবী তুমি শত্রু দমন করে আমায় সমৃদ্ধির সহিত আমাকে বিজয় প্রদান কর। শ্রী রামচন্দ্র যেরূপ রাবণ কে পরাজিত করে বিজয় লাভ করেছিলেন, আমাকেও সেইরূপ বিজয় প্রদান কর।’
দশমী তিথি শেষ হলেই অপরাজিতা পুজো করার অবশ্য কিছু কারণ আছে। ভারতের মহাজ্ঞানী কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র বলে, দশমী তিথি শেষ হলেই যুদ্ধ যাত্রার একদম ঠিক সময়। যেখানে বলা হয়েছে, কোনো রাজা যদি দশমীর পরের দিন বিজয় যাত্রার শুরু করেন, তাহলে তার পরাজয় হয় না। বিজয়লক্ষীকে বরণের আশা নিয়েই আগেকার দিনে করা হত অপরাজিতা পুজো। তাই যুদ্ধে অপরাজিত থাকতে এদিন যুদ্ধযাত্রা করতেন রাজারা। যে ধারা আজও কিছু পুজোতে বর্তমান। পণ্ডিত রঘুনন্দনের লেখা তিথিতত্ব নাম গ্রন্থে অপরাজিতা পুজোর উল্লেখ রয়েছে। যা দুর্গার ওপর রূপ বলেই বর্ণিত। এই পুজোর পরেই রাজা যুদ্ধ জয়ের উদ্দেশ্যে রওনা হতেন।