যিশুর কৈশোর ও প্রথম যৌবন, মানে, ১৩ থেকে ৩০ বছর বয়স অবধি তিনি কী করেছেন, তা নিয়েই ধন্দ বা বিতর্ক সবচেয়ে বেশি। সেটাই ‘লস্ট ইয়ারস’। যিশুর জীবনীতে সেই সময়টার সুস্পষ্ট উল্লেখ নেই। এই সময়কাল নিয়ে অনেক কিছুই শোনা যায়। গবেষকদের কারও কারও ধারণা, যিশু ‘সিল্ক রোড’ ধরে পূর্বাভিমুখে রওনা দেন। এখন যেখানে রয়েছে ভারত, তিব্বত ও চিন।
একদল গবেষক যিশুর এই এশিয়ায় আসার তত্ত্ব স্বীকার করে বলেন, তাঁর যখন ৩০ বছর বয়স, স্বদেশে ফিরে যান। সেখানে ধর্মপ্রচার শুরু করেন। ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভেদ এখানেই।
আর বিশ্বাসীদের একাংশের ধারণা, বহু বছর যিশু ভারতে কাটিয়েছেন। মধ্য প্রাচ্যে আর ফিরে যাননি। কাশ্মীরে মারা যাওয়ার পর তাঁর দেহ শ্রীনগরের রোজা বাল মাজারে সমাধিস্থ করা হয়।
বর্তমানে যা কাশ্মীর, সেখানেই তাঁর দেহবসান হয়। সমাধিস্থও করা হয় কাশ্মীরে। এই মতের প্রবক্তারা মুসলিম সম্প্রদায়েরই এক গোষ্ঠী। তাঁদের বিশ্বাস, যিশু খ্রিস্ট দেহ রেখেছিলেন এই কাশ্মীরের বুকে।যিশুর হিমালয়যাত্রার কথা বলা আছে হিন্দুর ভবিষ্য পুরাণেও। সেখানে তাঁর সঙ্গে দেখা হয়েছিল শক সম্রাট শালিবাহনের।
কিন্তু কেন মনে করা হয় এমনটা?
যীশু খ্রিস্টের জীবন ও বাণীর সবথেকে পুরোনো তথ্যগুলো যেখানে সংকলিত হয়ে আছে সেটি হলো ওল্ড টেস্টামেন্ট। ওল্ড টেস্টামেন্ট কিন্তু যীশুর বারো থেকে তিরিশ বছর বয়স অব্দি জীবনের ব্যাপারে চুপ।
ভারতের লাদাখের দিকের হেমিস মঠ ও ওই এলাকারই আরেকটি প্রাচীন মঠে যে প্রাচীনতম ও গোপনতম পুঁথিগুলো রাখা রয়েছে তার মধ্যেও কয়েকটি পুঁথিতে একজন ‘ক্লান্ত বিধ্বস্ত অবস্থায় আসা বিদেশী সাদা চামড়া’ র মানুষের শুশ্রূষা ও পরে তাঁর পড়াশোনা করার কথা বলা রয়েছে।
যে কাশ্মীরে যীশুর বসবাস নিয়ে এত রহস্য রয়েছে, সেই কাশ্মীরেই ‘গুটলিবাগ’ নামের একটা জায়গায় কিছু মানুষ বসবাস করেন। এঁরা কাশ্মীরি মানুষ হলেও, বাকী সমস্ত কাশ্মীরি মানুষদের থেকে এঁদের জীবনযাত্রা আলাদা।
অনন্তনাগের একটি স্থানে ‘আসাই ঈসা’ অর্থাৎ ঈসা যে লাঠি নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে এই দেশে এসেছিলেন সেই লাঠিটিও রাখা আছে বলা হয় ‘আস মুকাম’ নামের মসজিদে যে জায়গাটার অর্থ হলো ঈসার শান্তিপূর্ণ বাসস্থান।
রোজাবলের সমাধির গোপন কক্ষটি সিল করে দেওয়া হয়। এই সমাধিতে দুজন শায়িত আছেন। একজন মুসলিম ব্যক্তি এবং আরেকজন সেই বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব ইয়ুজ আসিফ। অদ্ভুত ব্যাপারটি হলো, মুসলিম ব্যক্তির শবদেহ উত্তর দক্ষিণ মুখে শোয়ানো আছে ইসলামিক রীতি মেনে, কিন্তু রোজাবলের কবরের এই গোপন কক্ষ যাঁরা নিজের চোখে দেখেছেন তাঁদের বয়ানেই আরেকটি শবদেহ রয়েছে পূর্ব পশ্চিম মতে শোয়ানো। এই ভাবে মৃতদেহ শুইয়ে রাখা ইসলামিক মতে অধার্মিক কাজ শুধু নয়, এই কাজটি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধই।
রোজাবল সমাধিক্ষেত্রে একটি পাথরে ইয়ুজের পায়ের ছাপ রয়েছে, যেটিতেও দুটি ক্ষতচিহ্নের আদলে চিন্হ খোদাই করা রয়েছে। তার থেকেও বড় রহস্য হলো যে এই চিন্হদুটি দুই পায়ে একই জায়গায় নেই, চিন্হ দুটি তখনই একে অপরের ওপর সরলরেখায় পরে যখন একটি পাকে
এর পরেও সেই একই প্রশ্ন ঘুরেফিরে দানা বাঁধে, যিশু রহস্যের সমাধান কি আদৌ সম্ভব? আরও গবেষণা প্রয়োজন। কিন্তু, জঙ্গিদের বাড়বাড়ন্তে আর এগোতে পারছেন না গবেষকরা। তাই মাজারের বুকে থমকে আছে যিশুরহস্য।