Dainik Sangbad – দৈনিক সংবাদ
Image default
FEATURED ট্রেন্ডিং

চাকরি খুঁজতে এসে পড়লেন কিডনি পাচারকারীদের পাল্লায়! ভয়াবহ অভিজ্ঞতা যুবকের

গুজরাটের বাসিন্দা রঘুর আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল না। কয়েক মাস আগে চাকরির খোঁজে দিল্লিতে এসেছিলেন। রঘুর মতে, চাকরি পাওয়ার আগেই কেউ তার পার্স ও মূল্যবান যা কিছু জিনিসপত্র ছিল সেগুলো চুরি হয়ে যায়। তারপর কোনো উপায় না পেয়ে দিল্লির এক গুরুদ্বারে পৌঁছে যায় অসহায় ওই যুবক। সেখানে দিন চারেকের জন্য আশ্রয় নেয় রঘু। সেই সময় তার পরিচয় হয় রঘু নামক এক যুবকের সাথে। রাজু বুঝে যায় রঘুর কাছে টাকা নেই।

এর পর রাজু রঘুকে পরামর্শ দেয় সে যদি তার একটি কিডনি দিয়ে দেয় তাহলে তার সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে এবং সে এত টাকা পাবে যে তার সব কাজ হয়ে যাবে। রঘু জানায়, সে প্রথমে অস্বীকার করেছিল, কিন্তু রাজু তাকে বোঝাতেই থাকে। তিনি প্রতিদিনই রঘুকে কিডনি দেওয়ার কথা বলতে থাকে। বলে তুমি যদি এমনটা করো একজনের জীবনও বাঁচবে এবং অর্থও পাওয়া যাবে। শরীরে কোনো অসুবিধেও হবে না। ক্রমাগত চাপের মুখে রঘু রাজুর কথায় সায় দিয়ে দেয়।

এরপর রাজু সরাসরি রঘুকে নিয়ে বিপিন নামে এক ব্যক্তির কাছে যান। বিপিন ছিল দালাল। রঘুকে নিয়ে পশ্চিম বিহারে ভাড়া করা ফ্ল্যাটে পৌঁছে যান বিপিন। রঘুর সমস্ত মেডিকেল পরীক্ষা পরবর্তী ১০ দিনের মধ্যে সারা হয়। এরপর তার পরিচয় হয় একজনের সাথে যার কিডনির প্রয়োজন ছিল। ১৩ মে রঘুকে পশ্চিম বিহারের ফ্ল্যাটে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আরও একজন দালাল উপস্থিত ছিলেন। এর পরে, রঘুকে গোহানার সোনিপতের নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, যেখানে কিডনি প্রতিস্থাপন করা হবে।

পুলিশ হেফাজতে আসামি।

রঘু জানায়, শনিবার সন্ধ্যায় তাকে নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয় এবং রবিবার অস্ত্রোপচার করা হয়। শনিবার রাতে সেখানে চিকিৎসক এসেছিলেন। রঘু জানায়, কিডনি প্রতিস্থাপনের পর তিনি প্রচণ্ড পেটে ব্যথায় ভুগছিলেন এবং ৩ দিন পর তাকে আবার দিল্লিতে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানে তাকে ২ লাখ টাকা দেওয়া হয় এবং বলা হয় বাকি টাকা সেলাই কাটার পর দেওয়া হবে।

রঘুর বক্তব্য অনুযায়ী, সেলাই কাটার সময় তাকে আরও এক লাখ ২০ হাজার টাকা দেওয়া হয়, তারপর তাকে ট্যাক্সিতে করে হাজরানীতে নিয়ে যাওয়া হয়। তাদের আসার কিছুক্ষণ পরেই পুলিশ আসে এবং রঘু পুরো বিষয়টি পুলিশের সামনে খুলে বলে।

এই ঘটনায় এক চিকিৎসক সহ মোট ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে দিল্লি পুলিশ। পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, ওই গ্যাং লিডার কুলদীপ। সূত্র অনুযায়ী ওটি টেকনিশিয়ান কুলদীপ ট্রান্সপ্লান্টে ডাক্তারদের সাথে থাকতেন। জিজ্ঞাসাবাদে কুলদীপ পুলিশকে জানিয়েছে যে সে একাই পুরো অভিযান চালাতে পারে। পুলিশ খতিয়ে দেখছে কে বা কারা এই অভিযান চালিয়েছে?

পুলিশ জানায়, এই লোকেরা কিডনি বিক্রি করতে ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত নিত। এজেন্টরা পেত ৩০ হাজার, ডাক্তার ৩ লাখ, ল্যাব টেকনিশিয়ান পেত ৪০ হাজার। কিছু টাকা তিনি ভিকটিমকে রাখা এবং পরীক্ষা করতে খরচ করতেন, বাকিটা কুলদীপ ও সোনু রেখে দিতেন। যেখানে কিডনি দাতারা পেতেন মাত্র ২ থেকে ৪ লাখ টাকা।

পুলিশ বলছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই র‌্যাকেট চালানো হচ্ছিল। শৈলেশ একটা পেজ বানিয়েছিল, যেটাতে সেই সব লোক যোগ দিত, যাদের কিডনি দরকার। শৈলেশ খুব গরীব লোকদের খুজেঁ বার করত, তারপর তাদের দিল্লিতে নিয়ে আসা হতো এবং প্রলোভন দেখিয়ে কিডনি বার করে নেওয়া হত।

গ্রেফতার চিকিৎসক ও দালাল মো.

তথ্য অনুযায়ী, গত ২৬ মে এই অবৈধ র‌্যাকেটের তথ্য জানতে পারে হাউজ খাস থানার পুলিশ। আসলে প্রতিস্থাপনের আগে নির্যাতিতার সমস্ত পরীক্ষা করা হতো এখানকার একটি ল্যাবে। এখানেই পুলিশ পিন্টুকে খুঁজে পায়, যিনি পরীক্ষা করার জন্য দালালদের নিয়ে এসেছিলেন। পিন্টুর সহায়তায় পুলিশ প্রথমে হাউজ রানীর টাউটদের আস্তানায়, তারপর পশ্চিম বিহার এবং তারপর গোহানার নার্সিংহোমে পৌঁছায়।

দক্ষিণ দিল্লির ডিসিপি বেনিতা মারি জয়কার বলেছেন, “২৯ মে দিল্লি পুলিশের দল গোহানা পুলিশ দল, এফএসএল, ডিএনএ বিশেষজ্ঞ, জীববিজ্ঞান বিশেষজ্ঞদের দল, সাইবার বিশেষজ্ঞদের দল এবং ফটোগ্রাফারদের দল অভিযান চালায়৷ সারাদিন ধরে চলা অভিযানে গোহানার হাসপাতালের সমস্ত ক্লু বাজেয়াপ্ত করে পুলিশ।

যেসব আসামি ধরা পড়েছে

সরবজিৎ ও শৈলেশ: নতুন শিকারকে ফাঁদে ফেলতে কাজ করতো।

মোহাম্মদ লতিফ (২৪ বছর): তিনি একটি ল্যাবে ফিল্ড বয় হিসেবে কাজ করতেন এবং প্রতিস্থাপনের আগে পরীক্ষা করাতেন।

বিকাশ (২৪ বছর) : তিনি পশ্চিম বিহারে কিডনি দাতাকে রাখার জন্য একটি ভাড়া বাড়ি নিয়েছিলেন। এটি আরও রঞ্জিতের সহায়তায় দাতাকে গোহানায় পাঠায়।

রঞ্জিত (৪৩ বছর): তিনি পশ্চিম বিহারের ফ্ল্যাটে দাতার দেখাশোনা করতেন এবং দাতাকে গোহানায় নিয়ে যেতেন।

ডাক্তার সোনু রোহিল্লা (৩৮ বছর): নিজেকে ডাক্তার বলে পরিচয় দেওয়া এই ব্যক্তি গোহানার সেটআপ বসিয়েছিলেন।

ডাঃ সৌরভ মিত্তল (৩৭ বছর): এন্ড্রোলজিস্ট ডাঃ মিত্তাল কিডনি প্রতিস্থাপনে সাহায্য করতেন।

কুলদীপ বিশ্বকর্মা (৪৬ বছর): একজন অপারেশন থিয়েটার টেকনিশিয়ান ছিলেন। অবৈধ প্রতিস্থাপনেও একসঙ্গে থাকতেন।

ওম প্রকাশ (৪৮ বছর): অবৈধ প্রতিস্থাপনের সময় তিনিও উপস্থিত ছিলেন।

মনোজ তিওয়ারি (৩৬ বছর): অবৈধ প্রতিস্থাপনের সময় তিনিও অপারেশন থিয়েটারে থাকতেন।

Related posts

‘বহুবার এলিয়েন প্লেন দেখেছি, কিন্তু কাউকে বললে চাকরি যায়’, দাবি অনেক পাইলটদের

News Desk

কেন কুমির রূপ ধারণ করে দেবী পার্বতীর পরীক্ষা নিয়েছিলেন মহাদেব? জেনে নিন পৌরাণিক কাহিনী

News Desk

কোথাও অনুরোধ, কোথাও কড়া ভাষায়, কঠোর পুলিশি নজরদারিতে পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে লকডাউনের প্রথম দিন

News Desk