সময়টা ১৫১৮ সাল , দিন জুলাই ১৪। স্ট্রসবুর্গ শহরে (তৎকালীন পবিত্র রোমান সাম্রাজ্যের অংশ) হঠাৎই দেখা গেল এক অবাক করা দৃশ্য। ফ্রাও ট্রফার (Frau Troffer) নামে এক মহিলা তার বাসা থেকে বেরিয়ে এসে নাচ শুরু করলেন। শীঘ্রই, তার চারপাশে একটি বিশাল ভিড় জমে যায়। সকলে এমন ব্যাপার দেখে অবাক। কেউ হাততালি দিয়েছিল, কেউ হেসেছিল , কেউ কেউ স্রেফ বিস্মিত হয়েছিল। কিন্তু ফ্রাও ট্রফারের নাচের উপর কোনও নিয়ন্ত্রণ ছিল না। তিনি নেচেই চলছিলেন। সকলে ভাবছিলেন তিনি পাগল হয়ে গেছেন। কিন্তু ফ্রাউ নাচ থামায়নি। একটানা ছয় দিন ধরে নাচতে থাকে সে। প্রতি রাতে ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়তেন তিনি , তার জুতো রক্তে ভিজে যেত, কিন্তু পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে সে আবার নাচ শুরু করতে।
এক সপ্তাহ যেতে না যেতেই আরো বহু মানুষ একই ভাবে নাচতে শুরু করে। দিন রাত চলতে থাকে তাদের নাচ। নাচতে নাচতে মারা যায় বহু মানুষ। এক টানা নাচতে গিয়ে প্রাণ হারায় বহু মানুষ। সেরিব্রাল স্ট্রোক আর হার্ট অ্যাটাক হয়ে মারা যায় তারা। তারপরও বাকিরা থামেনি। মৃত্যু অবধি চলতে থাকে তাদের নাচ।
ইউরোপের এই ঘটনা কুখ্যাত ‘ড্যান্সিং প্লেগ’ বা ‘নাচের প্লেগ’ নামে পরিচিত। পনেরশো শতকে ইউরোপের বেশ কিছু অঞ্চলে এই নিয়ন্ত্রণহীন ডান্সিং প্লেগ দেখা যায়। চিকিৎসকের পরামর্শপত্র, ক্যাথেড্রালের শমন পত্র, স্থানীয় সতর্কবার্তা, এমনকি স্ট্র্যাসবুর্গ সিটি কাউন্সিলের থেকে জারি প্রজ্ঞাপনেও এই ডান্সিং প্লেগের উল্লেখ আছে।
তৎকালীন ইউরোপে একে অপ্রাকৃতিক বিভিন্ন কলোজাদুর কারনে ঘটেছে বলা চাউর করা হয়। এর প্রতিষেধক হিসাবে বলা হয় আরও নাচতে থাকা। নাচিয়েদের জন্য একটি টাউনহলের ব্যবস্থা করেছিলেন তৎকালীন স্ট্র্যাসবুর্গ সিটি কাউন্সিল। কিন্তু এর ফল হয়েছিল উল্টো। শেষে অনেকে ঝার ফুকের সাহায্যও নিয়েছিল। ইউরোপের আরো বেশ কিছু শহরে এই একই ঘটনা ঘটেছিল সেই সময়।
এর কি কারণ তাই নিয়ে আজও বিজ্ঞানীরা ধন্ধে। তবে মনে করা হয় কোনো হিস্টিরিয়া ঘটিত কারণে বা কোনো খাবার ঘটিত বিষক্রিয়ার ফলে এই ঘটনা ঘটে।