কল্পবিজ্ঞানের সিনেমা নয়। বাস্তব ঘটনা। সূর্যের আলোকে শক্তিতে রূপান্তরিত করছে মামুলি এক ফল। বিজ্ঞানের ভাষায় এই প্রক্রিয়ার নাম, ‘হাই ইলেকট্রন ইঞ্জেকশন এফিশিয়েন্সি।’ যা আসলে বহুমূল্য, বিস্বাদ এক ফলের সুবাদে তা হচ্ছে নামমাত্র খরচে।
টকটকে লাল এই ফলের নাম সেন্ধুরি, রোহিনী বা রোরি। বাংলা, ঝাড়খণ্ডের (Jharkhand) জঙ্গলমহল এলাকায় এই গাছ অতি চেনা। তা যে সূর্যের আলোকে কাজে লাগাতে সাহায্য করবে কে জানত? যুগান্তকারী এই গবেষণা ইতিমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছেন আন্তর্জাতিক এক বিজ্ঞান বিষয়ক জার্নাল ‘ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ এনার্জি’ রিসার্চে। গবেষক বাসুদেব প্রধান সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অফ ঝাড়খণ্ডের এনার্জি ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক। তাঁর সঙ্গে এই গবেষণায় ছিলেন অরূপ মহাপাত্র, প্রশান্ত কুমার, জ্যোতি ভানসারে, অনীক সেনরা।
ঝাড়খণ্ডের ওই বিশ্ববিদ্যালেয়র ক্যাম্পাস জুড়ে এই গাছ। টকটকে লাল ওই ফল কেউ ভুলেও মুখে তোলেন না। সাধারণত টুকটুকে লাল এই ফলের রঙ থেকে সিঁদুর তৈরি করেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
এটুকু ছাড়া আর কোনও কাজেরই নয় এই ফল? এমন ভাবনা থেকেই গাছ থেকে পাকা ফল সংগ্রহ করেন বাসুদেব প্রধান। ফলের টুকটুকে লাল খোসাকে ডোবানো হয় ইথানলে। এই প্রক্রিয়াতেই ফল থেকে ন্যাচরাল ডাই বা রঙ সংগ্রহ করা হয়। সেই রঙ দিয়েই তৈরি করা হয় ডাই সেনসেটাইজড সোলার সেল।
কীভাবে? বাসুদেব প্রধান জানাচ্ছেন, সোলার সেল ওই লাল রঙে ডোবাতেই তা রক্তিম আভা ধারণ করে। ব্যবহার করতে গিয়েই চোখ কপালে। আগের তুলনায় দ্রুত সূর্যের আলো শক্তিতে রূপান্তরিত করছে সোলার সেল। গবেষকরা বলছেন, ফলের খোসায় কারবোনাইল এবং হাইড্রোক্সিল গ্রুপের উপস্থিতির কারণেই সোলার সেলের ন্যানো পার্টিকেল (Nano particle) ঝড়ের গতিতে কাজ করছে।
দীর্ঘদিন ধরেই সৌরশক্তি (Solar energy) নিয়ে কাজ করছে ঝাড়খণ্ডের এই বিশ্ববিদ্যালয়। ফলে গবেষণা করতে কোনও অসুবিধাই হয়নি।
পুরো গবেষণা সম্পূর্ণ করতে লেগেছে ছ’মাস। এখানে লাল রঙটিকে ফটো সিন্থেসাইজার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। গবেষকরা বলছেন, রিসার্চ সফল হওয়ায় এবার অতি অল্প খরচে সৌরশক্তিকে কাজে লাগানো যাবে। শুধুমাত্র গাছের ফল পাকা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। সোলার সেলকে শক্তিশালী করতে কৃত্রিম রঙ ব্যবহার নতুন নয়। কৃত্রিম সেই রঙের ক্ষতিকর দিক রয়েছে। নতুন এই প্রাকৃতিক রঙে কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই বলেই জানিয়েছেন গবেষকরা।