জমা জলের মধ্যে হঠাৎই বিকল হয়ে গিয়েছিল অ্যাম্বুল্যান্স। ভিতরে ছিলেন হৃদরোগে আক্রান্ত এক রোগী। মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। হাসপাতালে সময় মত না-পৌঁছলে, সমূহ বিপদ।তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে না পারলে দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। সামনের রাস্তায় শুধু জল। প্রায় দেড় ফুট জলে ডুবে অ্যাম্বুল্যান্সটি। এই পরিস্থিতিতে কোনও কিছু না ভেবে সহকারীকে স্টিয়ারিং-এ বসিয়ে জলের মধ্যে নেমে বন্ধ আম্বুল্যান্সকে প্রায় আধ কিলোমিটার ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি ঠেলতে ঠেলতে শেষ পর্যন্ত রোগীকে হাসপাতালে পৌঁছে দিলেন চালক। আশপাশের লোকজন ঘটনাটি দেখলেও একজন সাইকেল আরোহী ছাড়া কেউই সাহাযে্যর হাত বাড়াননি। প্রবল বৃষ্টিতে জলমগ্ন হাওড়া শহরে শুক্রবার মানবতার নজির গড়লেন কোনার বাসিন্দা অ্যাম্বুল্যান্স চালক রঞ্জিত চট্টোপাধ্যায়।
শুক্রবার সকাল ৯টা নাগাদ হৃদরোগে আক্রান্ত হন অশোক ঘড়ুই (৫৫)। সেদিন সকালে হঠাৎই স্ট্রোক হয় অশোক বাবুর। এনিয়ে দ্বিতীয়বার। তাই পরিবারের লোকজন উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। স্থানীয় চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দেন। বাড়ির লোকেরা খোঁজাখুঁজির পর কোনার একটি ক্লাবের অ্যাম্বুল্যান্স খুঁজে পান। অশোক বাবুকে নিয়ে কোনার বাড়ি থেকে নিয়ে ড্রেনেজ ক্যানাল রোডের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভরতি করার জন্য রওনা হয় অ্যাম্বুল্যান্সটি। তাতে ছিলেন রোগীর স্ত্রী ও তাঁর এক আত্মীয়া। অ্যাম্বুল্যান্স চালক রঞ্জিত জানান, কোনা থেকে দাশনগর হয়ে ড্রেনেজ ক্যানাল রোডে আসাটা সহজ হলেও হাওড়া-আমতা রোড-সহ দাশনগরের বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন থাকায় তিনি কোনও ঝুঁকি নেননি। ঘুরপথে বাঁকড়া দিয়ে ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক হয়ে কোনা এক্সপ্রেস দিয়ে বেলেপোল মোড়ে ড্রেনেজ ক্যানাল রোডে এসে পৌঁছান। তিনি বলেন, “বেলেপোলের মোড়ে এসে দেখি প্রায় দেড়ফুট জল। পুলিশ সমস্ত গাড়ি ঘুরিয়ে দিচ্ছে। আমি রোগীকে দ্রুত পৌঁছবার জন্য ঝুঁকি নিয়ে জলের মধ্যে গাড়ি চালিয়ে দিই। আর কিছুটা গিয়েই বিপত্তি। বন্ধ হয়ে যায় গাড়ির স্টার্ট। হাসপাতাল তখনও প্রায় আধ কিলোমিটার।”
ওই অ্যাম্বুল্যান্স চালক জানান, তিনি একটুও না ঘাবড়ে সহকারীকে স্টিয়ারিং-এ বসিয়ে জলে নেমে রোগীসুদ্ধ অ্যাম্বুল্যান্স ঠেলতে শুরু করেন। একটাই লক্ষ্য, হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভরতি করা। অ্যাম্বুল্যান্স ঠেলতে ঠেলতে হাঁফিয়ে গেলেও থেমে যাননি তিনি। অশোকবাবুর আত্মীয়া রুমা ধাড়া বলেন, “জমা জলের মধ্যেই একা গাড়িটি ঠেলতে ঠেলতে হাসপাতালে পৌঁছে দেন উনি। শেষে হাসপাতালে পৌঁছে ক্লান্ত হয়ে সিঁড়িতে বসে পড়েন। এই সাহায্য আমরা কোনও দিন ভুলব না।” রঞ্জিতবাবু বলেন, “রোগীকে হাসপাতালে পৌঁছনোটাই আমার কাজ। তাই করেছি।” তার এই মানবিকতাকে কুর্নিশ জানিয়েছেন গোটা শহরবাসী।