দশমী আসলেই দেখা যায় বিষাদের সুর। বিভিন্ন বনেদি বাড়িতে কিংবা বারোয়ারি পুজো মণ্ডপ গুলিতে জোরকদমে চলে সিঁদুর খেলা। কিন্তু এখানে সপ্তমীতে বাড়ির মহিলারা মেতেছেন সিঁদুর খেলায়। যেন একটু অন্য রকম নিয়মে বাঁধা এই বনেদি বাড়ির পুজো ।
পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুরের গোপালমাঠের রায়বাড়ির পুজো ২৫০ বছরের পুরোনো। বনেদি বাড়ির এই পুজোর সাথেই জড়িয়ে রয়েছে নানান ইতিহাস এবং বাঙালির সংস্কৃতি। সপ্তমীর সকালে পালকিতে কলাবৌ নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় পুকুরে। সেখানেই হয় স্নান। কলাবৌ স্নান সেরে ফিরে এলে পানপাতা, প্রদীপ দিয়ে তাকে বরণ করে বাড়ির মেয়েরা। এরপর মন্দির চত্ত্বরেই হয় সিঁদুরখেলা। রায়বাড়িতে দশমীতে নয়, সিঁদুরখেলা হয় সপ্তমীতেই।
এই আচারকে এখানে বলা হয় ‘দোলা নিয়ে আসা’। পূজার আচার সম্পন্ন হলে বাড়ির মহিলারা একে একে দেবীবরণ শেষে শুরু করেন সিঁদুর খেলা। রায় বাড়িতে সপ্তমীর দিন সকালে গেলে মনে হবে যেন দশমীর আমেজে মেতে উঠেছেন সবাই।। দশমীর মতোই এখানে সকলে সকলের স্বামীর দীর্ঘায়ু কামনা করেন। সপ্তমীর পুজো শেষ করার পর এখানে মন্দিরে মন্দিরে চালকুমরো বলি দেওয়ার রীতি রয়েছে।
কিন্তু কেন এই সপ্তমীতে সিঁদুর খেলার ব্যাতিক্রমী রীতি?
জানা গিয়েছে, এটা এখানকার দীর্ঘ দিনের রীতি। গোটা এলাকার মহিলারা চলে আসে সিঁদুর খেলতে। আসলে এখানে একটা সময় আলাদা করে মূর্তি গড়ে দেবীর পূজা করার চল ছিল না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পটের বা সাজে গড়া দেবীর সামনে মঙ্গলঘট স্থাপন করে পূজো করা হত। ফলে বিসর্জন আলাদা করে কোথাও তেমন একটা হত না। বরণ করারও সুযোগ ছিল না। তাই মহিলারা আগে ভাগেই সেরে রাখতেন সিঁদুর খেলার উপাচার।
এখন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পুজোর অনেক কিছুই পাল্টে গিয়েছে। বেশিরভাগ মণ্ডপে মূর্তি গড়েই পুজো করা হয়। বিসর্জনের রীতিও রয়েছে। তবে অনেক কিছু বদলালেও বদলায়নি সিঁদুর খেলার রীতি।