শিশু বয়সে ক্লাসে দুষ্টুমি করা এবং সেটা ঘিরে শিক্ষক শিক্ষিকাদের বকুনি এই অভিজ্ঞতা আমাদের সকলের জীবনেই আছে। শিক্ষকরা আমাদের স্নেহের শাসনই করতেন। কিন্তু ব্যাতিক্রমী ঘটনাও আছে। যেখানে অহেতুকই অতিরিক্ত মারধর করা হয় ছোট ছেলে মেয়েদের। তেমনই এই ঘটনা। সামান্য কারণেই তিরুবনন্তপুরাম এর আল আমিনের জীবনটাই পাল্টে যায়। তখন বয়স মাত্র ৯ বছর। রোজকার মতন স্কুলে গিয়েছিলেন। কিন্তু অকারণেই শাস্তি পেয়েছিলেন সেদিন যাতে তার এমন ক্ষতি হয়ে যায় যা অপূরণীয়। তিনি প্রথম বেঞ্চে বসতেন। এক বন্ধু পিঠে খোঁচা মারায় দেখতে গিয়ে পিছনে তাকান। প্রথম বেঞ্চে বসা ছাত্র অমনোযোগী দেখে রেগে যান শিক্ষিকা। তাকে শাস্তি দিতে শিক্ষিকার হাতে থাকা পেনটি সোজা ছুড়ে মারেন আল আমিন এর দিকে। আল্লাহ আমিনের বা চোখে সোজা এসে ওই পেনের নিবে টা গেঁথে যায়।
এক চোখে অন্ধ সেদিন থেকেই আমিন। তিনি একজন সরকারি স্কুলের ছাত্র ছিলেন। মামলাও হয়েছিল স্কুলে তাঁর সঙ্গে হওয়া ঘটনাটি নিয়ে। অভিভাবকেরা এলাকায় প্রতিবাদ বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন। অবশেষে মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে ১৬ বছর পর। গত ৩০ সেপ্টেম্বর ২০০৫ সালের ১৮ ডিসেম্বরের ঘটনাটির রায় দিয়েছে আদালত। আদালত থেকে দোষী সাব্যস্ত করার পাশাপাশি সেই শিক্ষিকাকে তাঁকে আমিনের পরিবারকে তিন লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতেও বলা হয়েছে। যদিও এই রায়ে একেবারেই সন্তুষ্ট নন আমিন। তাঁর কথায়, আর কোনও ক্ষতিপূরণই তাঁর কাজে লাগবে না। কারণ যা ক্ষতি হওয়ার তা যথেষ্ট হয়েই গিয়েছে।
১৬ বছর পড়াশোনা করেছেন আমিন এক চোখের দৃষ্টিতেই। ঘটনাটি যে স্কুলে ঘটেছিল, দশম উত্তীর্ণ হন সেই গভর্নমেন্ট হাইস্কুল অফ কান্ডালা থেকেই। আমিন জানিয়েছেন, শুধু শরীরে নয়, তাঁর মনের উপরও পড়েছিল ওই ঘটনার প্রভাব। ৯ বছরের আমিন মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছিল। তাঁর অসুবিধা হয়েছিল পড়াশোনা করতে। ফলে ক্রমে পরীক্ষায় খারাপ নম্বর আনতে শুরু করেন এক সময়ের মেধাবী ছাত্র। দশম শ্রেণির পর পলিটেকনিক কলেজে ভর্তি হলেও শেষ পর্যন্ত শেষ করতে পারেননি কলেজ।
এখন ২৫ বছর আমিনের বয়স। তিনি জানিয়েছেন, তাঁরই পরিবারের খেয়াল রাখার কথা এই বয়সে। বদলে তাঁর খেয়াল রাখতে হচ্ছে পরিবারকে। তাই ক্ষতিপূরণ নয়, চাকরি চান তিনি। গত ১৬ বছর নষ্ট হয়েছে সরকারি স্কুলের শিক্ষিকার অপরিণামদর্শিতায় । আমিন মনে করেন, এখন তাঁর জীবন কিছুটা শুধরে দিতে পারে একটি সরকারি চাকরিই।
রায় প্রসঙ্গে আমিনের বক্তব্য, ‘‘ আমার বাড়ির ৫০০ মিটারের মধ্যে ওঁর বাড়ি। তবু একবারও আমার খবর নেননি গত ১৬ বছরে । দোষ করেছিলেন শিক্ষিকা । দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন তাই। আমার বরং অবাক লাগছে এটা ভেবে যে, ১৬ বছর লেগে গেল দোষীর বিচার হতে!’’