আপনি যদি অতীত ঘেটে দেখেন তবে আজ থেকে প্রায় ২হাজার বছর আগেও দিনাজপুর জেলাকে আলাদা ভাবে অস্তিত্ব পাওয়া যায় ৷ এই দিনাজপুর জেলাটি পৌরানিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে পরিপূর্ণ৷ যেমন মৌর্য গুপ্ত পাল সেন যুগের ইতিহাস বহন করছে তেমনি ইসলামের আগমন এবং বৌদ্ধ ও জৈন সময়কালীন ঐতিহ্যে পূর্ণ দিনাজপুর জেলা৷
এক ঐতিহাসিক নিদর্শন দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার তপন থানার অন্তর্গত ভায়র গ্রামের ঘাটুল নামক স্থানে রয়েছে। একসময় দেবী মূর্তির ভগ্নাবশেষ মাটির টিলায় পাওয়া গেছিল এখানে। অনেক পরে এই দেবীর কোমরের নীচের অংশগুলি পাওয়া গেছে অন্য জায়গায়। দেবীর যে মূর্তি সমস্ত অংশ মিলিয়ে পাওয়া যায় তা চন্ডীদেবীর কোনো এক রূপ। দেবী উগ্রচন্ডা, কালিকাপুরাণে উল্লিখিত রূপটির নাম।
১৮ টি হাত দেবীর এবং অস্ত্র আছে প্রতিটি হাতে। ভগবত্ সূত্র ধরে মহালক্ষী বলা হয় আঠেরো হাতের দেবীকে । তবে এই দেবীমূর্তির মহালক্ষীর সাথে বেশ পার্থক্য আছে। মাথায় মুকুট, গলায় স্বর্ণালঙ্কার এবং নাগহার রক্তবর্ণের দুটি চোখ দেবীর। একটু অন্যরকম এই দেবীর পূজা পদ্ধতি। নানান সুগন্ধি ফল মিষ্টি দ্বারা দেবীর পূজা হয় দুর্গা অষ্টমীর দিনে। পশুবলি হয় নবমীর দিন । তন্ত্র মতে দেবী পূজা হয়।
বর্তমানে অনেক ধুমধামের সাথে বৈশাখ মাসের প্রথম শনিবার এখানে পূজা হয়, জৈষ্ঠ্য মাসের কুড়ি তারিখের পরের মঙ্গলবার, শ্রাবণের শেষ শনিবার পূজা হয় । পুনর্ভবা নদী বইছে এই দেবী স্থানের কাছেই। বর্তমানে একটি বহু পুরোনো তেঁতুল গাছের তলায় অবস্থিত এই মূর্তিটি। লোকমতে মন্দির ধ্বংস করেন এবং দেবী মূর্তি ভেঙে দেন কালাপাহাড় নামে কোনো এক মুসলিম ক্ষুব্ধ রাজা।
অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন এই ভাঙ্গা মূর্তি কে কিন্তু বাইরে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। শায়িতমহাদেব মূর্তি দেখা যায় টিলায় উদ্ধার হওয়া আর একটি অংশে। উল্লেখ্য ঘন্টেশ্বর দেবী নামে পরিচিত এই দেবী মূর্তি এবং স্থানটি মায়ের থান বলেই লোকমুখে পরিচিত।