জীবন যে কখন কিভাবে মোড় নেয় তা কেউই ভবিষ্যৎবাণী করতে পারে না। তবে অধ্যবসায় থাকলে মানুষ অসাধ্যও সাধন করতে পারে। ঠিক কিছুটা এমনই কাহিনী বলিউড অভিনেতা মানব কৌলের। তুমাহরি সুলু, কাই পো চে খ্যাত এই অভিনেতার ছোটবেলা ছিল সমস্যা জর্জরিত। কাশ্মীরি পণ্ডিত মানবের জন্ম কাশ্মীরে। ছোটবেলায় কিছুদিন কাশ্মীরে কাটানোর পর সেখানকার পরিস্থিতি ক্রমে উত্তপ্ত হয়ে ওঠায় পরিবার সমেত মানব চলে আসে মধ্যপ্রদেশের এক ছোট শহরে। পরিস্থিতির শিকার হয়ে সময়ের আগেই সরকারি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন মানবের বাবা। পড়াশোনার ক্ষেত্রে বরাবরই মানব খুব একটা মনোযোগী ছিলেন না, কিন্তু ছোটবেলাতেই বুঝেছিলেন উপার্জনের তাগিদ। এই তাগিদ থেকেই ছোটবেলায় নর্মদা নদীর বক্ষে পুণ্যার্থীদের ফেলে দেওয়া পয়সা ডুব দিয়ে কুড়িয়ে আনতে মানব এবং তার বন্ধুরা। এইভাবেই তার সাঁতার কাটা শুরু। অবশ্য এর পরে তার এই সাঁতার কাটার ক্ষমতা চোখে পড়ে প্রথাগত এক প্রশিক্ষকের। সাঁতার শিখে আস্তে আস্তে মানব কৌল হয়ে ওঠেন জাতীয় স্তরে সাঁতারু।
এই সাঁতার কাটাই তার সামনে এনে কোটায় সরকারি চাকরির সুযোগ। কিন্তু তার জীবনে প্রভাব ফেলে দেয় একটি নাটক। যেই নাটক দেখার পরে মানব সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন আর কিছু না, তিনি শুধু অভিনেতাই হবেন। সরকারি চাকরির সুযোগ থাকলেও তাই সেই নিশ্চিৎ ভবিষ্যৎ ছেড়ে অভিনয় জগতে প্রবেশ করেন মানব কৌল।
অভিনয়ের পাশাপাশি উপার্জনের জন্য মানব কৌল ভোপালে বিক্রি করতেন ফ্লপি। সারাদিন কাজ করে যেতেন নাটকের রিহার্সালে। কিন্তু তিনি বোঝেন মুম্বাই না এলে কিছু হবে না। এমন ভাবনা থেকেই নিজের বাইক বিক্রী করে চলে আসেন মুম্বাই। মুম্বাই এসে মানব ছোটখাটো চরিত্রে অভিনয় করতে শুরু করেন। কয়েকজন বন্ধুর সাথে থাকতেন তিনি। সেই সময় গুলশান কুমারের হত্যা রহস্যের জেরে উত্তপ্ত ছিল মুম্বাইয়ের সিনে জগৎ। প্রচুর ধরপাকড় এর মধ্যে মানব এবং তার বন্ধুদেরও উঠিয়ে নিয়ে যায় পুলিশ। পরে তাদের কোনো দোষ না থাকায় ছেড়ে দেওয়া হয় তাদের। জুনিয়র আর্টিস্ট হিসেবে কাজ করার সময় বহু অবহেলা সহ্য করেছেন মানব। তবে তিনি কখনই ভেঙে পড়েনি মাটি আঁকড়ে পড়েছিলেন।
অনেক মাটি রগড়ানোর পর সানি দেওয়ালের “চ্যাম্পিয়ন” ছবিতে প্রথম সুযোগ আসে বড় পর্দায় মুখ দেখানোর। কিন্তু সে জুনিয়র আর্টিস্ট হওয়ায় ভীষণ লাঞ্ছনা জোটে কপালে। এরপরই সিদ্ধান্ত নেন থিয়েটারই করবেন তিনি। থিয়েটারের সূত্রে ইরফান খানের সাথে পরিচয় হয় মানবের, সেই সূত্রেই কাজের সুযোগ আসে ‘বনেগি আপনি বাত’ ধারাবাহিকে। এরপর ‘যযন্তরম মমন্তরম’ ছবিতেও কাজ করেন তিনি। তিনি নিজে নাটকও লিখতেন। ‘শক্কর কে পাঁচ দানে’ ‘পিলে স্কুটারওয়ালা আদমি’ ইত্যাদি লেখা পুরুষ্কৃতও হয়েছে।
২০১৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি “কাই পো চে” তে তিনি বড় ব্রেক পান। এই সিনেমায় তার অভিনয় মুগ্ধ করে সবাইকে। সিটিলাইটস’, ‘ওয়াজির’ ছবিতে তার অভিনয় মুগ্ধ করেছে দর্শকদের।
তবে ২০১৬ সালে মানব কউলের সবথেকে বেশি বাণিজ্যসফল ছবি ‘তুমহারি সুলু’ মুক্তি পেয়েছিল। ছবিতে বিদ্যা বালনের চরিত্রের স্বামীর ভূমিকায় অভিনয় করেন তিনি। ছবিতে বিদ্যা বালনের মতো জনপ্রিয় তারকা অভিনেত্রীর পাশেও যথেষ্ট ছাপ ফেলেছিল মানব। বর্তমানে তিনি বলিউডের প্রচুর সিনেমাতে কাজ করেছেন। কাজ করেছেন ওয়েব সিরিজ এও। জীবনে আসা বাঁধা বিঘ্নের সন্মুখীন হয়ে আজ তিনি এক সফল অভিনেতা।