এখন না-হয় স্কুল বন্ধ। কিন্তু খোলা থাকলে জল-কাদা মাড়িয়ে রোজ অন্তত ১৪ কিলোমিটার হাঁটতে হয় বাচ্চাদের। কারণ শহর থেকে মাত্র ৪০ কিলোমিটার দূরে হলেও এ রাস্তায় বাস চলে না। অধরা অ্যাম্বুল্যান্সও। এ দিকে মাঠের ফসল কেটে ফাঁপরে পড়তে হচ্ছে চাষিদের। পাকা একটা রাস্তা নেই বলে ভালো ঘরে বিয়েও হয় না মেয়েদের। তাই পাকা রাস্তার দাবিতে এ বার ধনুকভাঙা পণ করে বসলেন গ্রামের মেয়ে। যত দিন না রাস্তা তৈরি হচ্ছে, বিয়েই করব না- এই মর্মে খোদ কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী বাসবরাজ বোম্মাইকেই ইমেল করে বসলেন দেবনাগরী জেলার এইচ রামপুরা গ্রামের বছর ছাব্বিশের শিক্ষিকা বিন্দু আর ডি। আর তাতেই টনক নড়ল প্রশাসনের।
৯ই সেপ্টেম্বর মুখ্যমন্ত্রীকে মেল করেছিলেন বিন্দু। সপ্তাহখানেকের মাথায় বৃহস্পতিবারই তাঁর গ্রাম ঘুরে গিয়েছেন প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিরা। স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের দাবি, খেপে-খেপে ১-২ লাখ টাকা খরচ করে মাঝে মাঝেই রাস্তা সারাইয়ের কাজ হয়। কিন্তু বাস চলাচলের মতো পাকা রাস্তা তৈরি করতে প্রয়োজন প্রায় এক কোটি টাকা। ওই টাকা অনুমোদনের জন্য সরকার এবং স্থানীয় বিধায়ককে অনুরোধ করেছে রামপুরা পঞ্চায়েত অফিস৷ সূত্রের খবর, যত দ্রুত সম্ভব পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
কিন্তু এই অভিনব প্রতিবাদের কথা মাথায় এল কী করে? বিন্দুর সাফ জবাব, ‘এ ছাড়া আর কোনও উপায়ের কথা ভাবতে পারিনি। আমার নিজেরই একাধিক বার বিয়ে ভেঙেছে শুধু গ্রামে রাস্তা নেই বলে। কেউ আসতে চান না আমাদের গ্রামে। গ্রামে থেকে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার উপায় ছিল না বলে দীর্ঘদিন হস্টেলে থেকে পড়াশোনা করতে হয়েছে আমায়। সবাই কিন্তু তা পারে না। স্কুল-কলেজে যাতায়াতের এই অবস্থার জন্য ড্রপ আউটের সংখ্যাও বাড়ছে।’
সব মিলিয়ে বড়জোর ৫০টি ঘর গ্রামে। জনসংখ্যা তিনশোর বেশি নয়। কিন্তু ন্যূনতম নাগরিক সুবিধাটুকুও তাঁরা পান না বলে অভিযোগ বিন্দুর। তাঁর কথায়, ‘ছোট থেকেই শুনছি, গ্রামে পাকা রাস্তার দাবিতে বিস্তর বিক্ষোভ-প্রতিবাদ হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। যাতায়াতের সমস্যার জন্য চাষিরা ফসল সময়মতো শহরে নিয়ে যেতে পারেন না। বয়স্ক, রোগীদেরও সমস্যার শেষে নেই। এ বার তাই আমরা এর শেষ দেখেই ছাড়ব।’