বাঙালির খাওয়া দাওয়া পোস্ত ছাড়া সম্পূর্ন হয়না। ঘটি হোক বা বাঙাল। গরম ভাতে প্রথম পাতে পোস্ত বাটা হোক কি পোস্ত বড়া, আলুপোস্ত, পোস্তর নানা পদ দিয়ে খাওয়ার মজা একমাত্র বাঙালিরাই জানে। আলু পোস্ত, বিউলির ডাল থেকে পোস্তর দানা ছড়িয়ে আলু ভাজা দিয়ে ডাল, যেন জাস্ট জমে যায়। এই অবধি শুনেই জিভে জল চলে এসেছে। অথচ বর্তমান বাজারে পোস্তর দাম যেখানে পৌঁছেছে সাধারন মধ্যবিত্তের পাতে পোস্ত পড়াটা বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাজারে খুচরো পোস্ত থেকে প্যাকেট-পোস্ত বিকোচ্ছে প্রায় ২৫০০ টাকা থেকে ৩০০০ টাকা এই দামে। পোস্তের দাম বাড়ায় তাই মন ভালো নেই বেশিরভাগ খাদ্য রসিকেরই। একটু পোস্ত আর ডাল এই সামান্য খাবার হলেই আগে সাধারণ মধ্যবিত্ত ঘরে মানুষের খাওয়া হয়ে যেত, মন ভরে যেত। কিন্তু বর্তমানে দুর্মূল্য পোস্ত কেনার কথা ভাবাও একটা কেমন স্বপ্নের মতন মনে হয়।পকেট বাঁচাতে পোস্ত খাওয়া কমানো ছাড়া, উপায় নেই।
তবে পোস্তর দাম নিয়ে মন খারাপ করে লাভ নেই। পোস্তর স্বাদ প্রায় ভুলতেই বসেছেন অনেকেই। তাই মন খারাপ না করে বরং অন্য উপায়ে নিজের পোস্ত খাবার বাসনা কে তৃপ্ত করুন। পোস্তর বদলে তিনটি অসাধারণ এমন জিনিস আছে যা আপনি ব্যবহার করতে পারেন। হ্যাঁ পুরোপুরি পোস্তর মতন খেতে না হলেও খুব একটা খারাপ লাগবে না।
প্রথমত, চিনা বাদাম বাটা:
চিনা বাদামের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পুষ্টি গুন। ছোট ছোট বাচ্চাদের জন্যে চিনাবাদাম ভীষণ ভালো। চিনা বাদামের মধ্যে যে প্রাকৃতিক তেল আছে, তার শরীরের ক্ষেত্রে ভীষণ উপকারী একটি স্নেহ উপাদান। যে কোন রান্নায় পোস্তর বদলে আপনি অনায়াসে চিনাবাদাম বাটা দিতে পারেন।
দ্বিতীয়তঃ, সাদা তিল বাটা :
সাদা তিল খাওয়ার শরীরের জন্য ভীষণ ভালো। যাদের রক্তে শর্করার সমস্যা আছে অথবা যে সমস্ত মেয়েদের পিরিয়ড সংক্রান্ত নানান রকম সমস্যায় বা জরায়ুতে কোনো সমস্যা আছে তারা অবশ্যই খেতে পারেন এই তিল বাটা। পোস্ত বাটার বদলে অবশ্যই খেতে পারেন সাদা তিল বাটা সর্ষের তেল দিয়ে গরম ভাতে। খেতে খারাপ লাগে না। তবে হ্যাঁ পোস্তর মতন স্বাদ হবেনা ঠিকই। তবে পোস্তর বিকল্প হিসেবে সাদা তিলের জুড়ি মেলা ভার।
তৃতীয়তঃ, চারমগজ বাটা -»
রান্নায় ব্যবহৃত চারমগজ বাটা আসলে তরমুজের বীজ থেকে প্রস্তুত করা হয়। এই চারমগজ আশে পাশের সব দোকানে কিনতে পাওয়া যায়। চারমগজ খাওয়া শরীরের জন্য বেশ ভালো। পোস্তর জায়গায় অনায়াসে আপনি চারমগজ বাটা দিয়ে রান্না করতে পারেন। মাছের ঝোল বা মাছের কালিয়ার মতো রান্নায় আমরা সাধারণত পোস্ত ব্যবহার করি ঝোল গাঢ় করার জন্য। সেখানে চারমগজ বাটা ভালো বিকল্প।
তাহলে আর দেরি নয়, এবার পোস্তর বিকল্প হিসাবে এই তিনটি উপাদানের মধ্যে যেকোনো একটি উপাদান ব্যবহার করে দেখতে পারেন। তবে আগে থেকেই বলে রাখছি,পোস্তর মত হয়তো অতটা সুন্দর খেতে লাগবে না। কিন্তু পোস্তর তুলনায় কোন অংশে কম হবেনা। ঠিক যেভাবে পোস্তর অন্যান্য রান্না করে থাকেন এই জিনিসগুলো দিয়ে একবার ট্রাই করে দেখুন। বাড়িতে অতিথি এলে বুঝতেই পারবেন না যে আপনি পোস্ত না দিয়েই রান্না করেছেন।